বস্তাবন্দি: আরও লোকসানের ভয়ে হিমঘর থেকে বার করা হচ্ছে না আলু। ধূপগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র
তাপমাত্রা কমছে না। ঠান্ডা-গরমে ধসায় আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হতে বসেছে হাজার হাজার বিঘের আলু। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ২ ব্লকে ইতিমধ্যেই এক হাজার হেক্টর জমির আলুর প্রায় পুরোটাই নষ্টের মুখে। এই সময়ে বৃষ্টি হলে গোটা জেলা জুড়েই ধসার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি দফতরের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই লিফলেট বিলি করে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও আলু চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক তপন মান্তা বলেন, “ধসা গোটা ব্লকেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই বহু জমির আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌসম সেবাকেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে মিশে যাচ্ছে। অপর দিকে, উত্তুরে হাওয়া বইছে না। ফলে তাপমাত্রা কমছে না। এই সময় বৃষ্টি হলে আলুর ধসা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, এই আবহাওয়ায় সরষে চাষেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই চাষিদেরও এখন থেকে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাতমাইল ফার্মাস ক্লাবের সম্পাদক অমল রায় বলেন, “সাধারণত এই সময় তাপমাত্রা দশ ডিগ্রির নীচে থাকে। এখনও তাপমাত্রা ওই জায়গায় নামেনি। এই তাপমাত্রার জন্যই আমরা ভয়ে আছি।”
এরই মধ্যে ধূপগুড়িতে অনেক চাষি বেশি লাভের আশায় হিম ঘরে আলু রেখে ক্ষতির মুখে পড়ে এখন দিশাহারা অবস্থায়।
বুধ ও বৃহস্পতিবার ধূপগুড়ি বাজারে ৫০ কেজির আলুর প্যাকেটের দাম ২৫-৩০ টাকা। ফলে হিমঘরে মজুত রাখা আলু বের করে বাজারে এনে বিক্রি করার অনীহা তৈরি হয়েছে আলু চাষি বা আলু ব্যবসায়ীদেরে মধ্যে। এর মধ্যে এক প্যাকেট আলু হিমঘরে রাখার খরচ ৮৬ টাকা। সেটাও সরকারের বর্ধিত সময় ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৫ ডিসেম্বরের পর প্রতি প্যাকেটে ৬ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। কাজেই এক প্যাকেট আলু হিমঘর থেকে ছাড়িয়ে আনতে খরচ হচ্ছে ৯২ টাকা। আর তারপর বিক্রি করে মিলছে মাত্র ২৫-৩০ টাকা। পাইকারি আলু ব্যবসায়ীরা হিমঘরে রাখা আলুর খরচ বাজারে আনার ভাড়া মিটিয়ে সেই আলু কিনে এনে খোলা বাজারে সাধারণ আনাজ ব্যাবসায়ীদের প্যাকেট বিক্রি করছে ১৪০-১৫০ টাকায়। ৩১ ডিসেম্বরের পর কোন চাষিই আর হিমঘর থেকে আলু বের করতে পারবে না। তখন হিমঘরে মজুত থাকা আলু হিমঘর মালিকরা নিলামে বিক্রি করে তাঁদের খরচ তোলার চেষ্টা করবে।
ধূপগুড়ির গাদংয়ের আলু চাষি আনিসুর ইসলাম বেশি লাভের আসায় হিমঘরে ২০০ প্যাকেট আলু রেখেছিল। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় তিনি আর হিমঘরমুখী হননি। তিনি বলেন, “২০০ প্যাকেট আলু ফলানোর জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। দিন দিন দাম কমতে কমতে এখন ২০০ প্যাকেটের দাম ঠেকেছে ৫ হাজার টাকায়। বর্তমানে ২০০ প্যাকেট আলু হিমঘর থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। যা লোকসান হওয়ার হয়েছে, আরও লোকসান বাড়িয়ে হিমঘর থেকে আলু বের না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
উত্তর দিনাজপুর জেলার নয়টি ব্লকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৯০ হাজার টন আলু চাষ হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলায় জলদি জাতের আলু তোলার কাজ শুরু করেছেন চাষিরা। খুচরো বাজারে নতুন আলু কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৪ টাকা দরে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy