বাজারের অগ্নিমূল্যের আঁচে ‘ফিকে’ শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মিড-ডে মিলের থালা। —ফাইল চিত্র।
ভাতের উপরে ছড়ানো ডিমের ঝোল। তবুও রং বদলায়নি ভাতের। কোনও দিন পাতে খিচুড়ি পড়লেও উধাও হলদে রং। বাজারের অগ্নিমূল্যের আঁচে ‘ফিকে’ শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মিড-ডে মিলের থালা। এমনই ছবি শহর থেকে গ্রাম, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং স্কুলগুলিতে। প্রভাব পড়ছে শিশু, কিশোরদের পুষ্টিতে। মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে সরব শিক্ষক-শিক্ষিকা, রাঁধুনিরাও।
শিক্ষা দফতরের দাবি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছ’বছর পর্যন্ত শিশুদের রান্না খাবার দেওয়া হয়। গর্ভবতীরাও রান্না করা খাবার পান অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে। এ ছাড়া প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক এবং হাই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ানো হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-পিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাথা-পিছু বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা। বাজারে অগ্নিমূল্যের কারণে মিড-ডে মিল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হেঁসেল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মী থেকে রাঁধুনিরা। তাঁদের দাবি, খুচরো বাজারে ডিম প্রতি পিস ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু, পেঁয়াজ, পটল, ঝিঙে, গাজরের মতো আনাজের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ দিকে, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা। হবিবপুরের রিনা পাল বলেন, “খিচুড়িতে ডাল থাকে না। গাজরের মতো আনাজ তো দূরের কথা, থাকে না হলুদটুকুও। ডিমের ঝোল ভাত দিলেও ঝোলে তেল, নুন দেওয়া হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক সহায়িকা বলেন, “ডিম ভাজতে হলে তেলের প্রয়োজন। মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল, নুন, আনাজ, দিয়ে রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না।”
একই ছবি স্কুলগুলির মিড-ডে মিলের মেনুতেও। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, মিড-ডে মিলের রান্নার মান খারাপ হলে আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এ ছাড়া অভিভাবকদের রোষের মুখেও পড়তে হয়। অথচ, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মিড-ডে মিল চালানো সমস্যার হয়ে উঠেছে। মালদহের এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অরুণকুমার প্রসাদ বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হলে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।” উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি গৌরাঙ্গ চৌহান বলেন, “বাজার আনাজ, ডিম, মুরগির মাংসের সঙ্গে দাম বেড়েছে আনাজেরও। পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।” মিড-ডের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, দাবি জেলাগুলির শিক্ষা দফতরের কর্তাদের।
তথ্য: অভিজিৎ সাহা ও মেহেদি হেদায়েতুল্লা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy