Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের মুখে বাড়ছে অস্ত্র, জাল নোট পাচার

ভোটের মুখে কোচবিহারে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি জাল নোট কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত দুই দিনে কোচবিহারে চার লক্ষাধিক টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে।

কোচবিহারে উদ্ধার জাল নোট। নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহারে উদ্ধার জাল নোট। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

ভোটের মুখে কোচবিহারে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি জাল নোট কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত দুই দিনে কোচবিহারে চার লক্ষাধিক টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন মোট ৫ জন। তাদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও দুই রাউন্ড কার্তুজও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এনিয়ে গত দুইমাসে জেলায় ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করল পুলিশ। জেলায় পরপর জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ বেড়েছে পুলিশের। ওই ব্যাপারে তরজা প্রকাশ্যে পড়েছে যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরের। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের মুখে এলাকা নিয়ন্ত্রণে শাসক দলের মদতে আগ্নেয়াস্ত্র ও জাল নোট কারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিরোধীদের মদতেই ওই সব কাজ চলছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “ বেআইনী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আগে থেকেই অভিযান হচ্ছে। এবার জাল নোট উদ্ধারেও জোর দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাতে প্রচুর জাল নোট, আগ্নেয়াস্ত্র সহ দুইজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, আসল টাকার বিনিময়ে জাল নোট লেনদেনের জন্য একটি চক্র কোচবিহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে গোপনসূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে রবিবার ফাঁদ পাতে পুলিশ। ওই জাল নোট কারবারীদের সঙ্গে ‘ সোর্স’ মারফৎ খদ্দের রয়েছে বলে বার্তা পাঠান হয়। সেইসূত্রেই ওই রাতে দুই ব্যাক্তি কোচবিহার কোতোয়ালি থানার সুটকাবাড়ি লাগোয়া এলাকায় আসেন। চারজন পুলিশ অফিসার সাদা পোশাকে ক্রেতা সেজে তাদের সঙ্গে দরদাম করতে যান। ধৃতরা চারটি প্যাকেটে রাখা এক হাজার টাকার জাল নোট দেখিয়ে জানায়, তাতে ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা রয়েছে। আসল ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেলে ওই জাল নোট তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ক্রেতা সেজে যাওয়া পুলিশ কর্মীরা অভিনয় করে দাম কমাতে বলেন। দরদাম নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই আগে থেকে তৈরি থাকা বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। সেখানেই হাতেনাতে ধরা হয় নুর হক মিঁয়া ও সাহিদুল ইসলামকে। নুরের বাড়ি অসমের বরপেটা জেলার কলাগাছিয়া এলাকায়। সাহিদুল কোচবিহারের চান্দামারি এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, দুটি কার্তুজ ও একটি নম্বর প্লেট বিহীন মোটর বাইক উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা অসম হয়ে জাল নোট,আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জেলায় ঢুকেছিল। নিছক বিক্রি ছাড়াও অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা তা দেখা হচ্ছে। মোটরবাইকটির মালিকের খোঁজ শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, শনিবার নিউকোচবিহার স্টেশন এলাকা থেকেও জাল নোট সহ তিন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে রেল পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অসমের বরপেটা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব সরকার, মোফাজ্জ্বল হোসেন ও দীপক সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তল্লাশি এক হাজার টাকার ৩০টি জাল নোট উদ্ধার হয়। রবিবারেও ধৃতদের মধ্যে একজন বরপেটা এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অসম হয়ে জাল নোট, অস্ত্র কারবারীদের আনাগোনার ওই সন্দেহ বেড়েছে।

গোটা ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরই ওই সব ঘটনায় পরস্পরের লোকদের মদতের অভিযোগ তুলেছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “ ভোটে এলাকা নিয়ন্ত্রণে আগ্নেয়াস্ত্র, জাল নোট মজুত করার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শাসকদলের মদতেই জেলায় ওই কারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ পাল্টা বলেন, “ যারা এসব বলছেন তাদের লোকদের মদতেই ওই কারবার হচ্ছে। ৩৪ বছর ওরা সেভাবেই ভোট করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election fake note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE