সুজনের শোকার্ত মা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে যোগ দিয়ে বাড়ি ফিরতে দেরি করেছিল ছেলে। সেই রাগে পরপর দু’দিন ধরে তাকে বেধড়ক মারধর করেছিল বাবা। কখনও চড়। কখনও ঘুঁষি। তখনই পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় রায়গঞ্জের কাশীবাটী বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুজন রায় (১২)। শনিবার রাতে মারা যায় সে। রায়গঞ্জের কালীতলা সোনাডাঙ্গির বাসিন্দা সুজনের বাবা সুব্রত রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন সুজনের মামা বিপ্লব শিকদার। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ধৃতের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুব্রতবাবু গাড়ির খালাশির কাজ করেন। সুজনের মা মলিনাদেবী পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সুজন সব থেকে বড়। তাঁদের দুই মেয়ে পূজা ও মৌ স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা জানিয়েছে, স্কুলের হয়েই প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রায়গঞ্জের স্টেডিয়ামে গিয়েছিল সুজন। বেলা ১১টা নাগাদ অনুষ্ঠান শেষ হয়। তারপরে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প ও খেলাধুলো করে তার বাড়িতে ফিরতে দুপুর ২টো বেজে যায়। তারপরেই কেন তার বাড়ি ফিরতে দেরি হল সেই প্রশ্ন তুলে সুব্রতবাবু সুজনকে ইচ্ছে মতো চড় ও ঘুঁষি মারতে থাকেন। শুক্রবার দুপুরে সুজন বাড়ির পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো করছিল। সে দিনও দুপুর দেড়টা নাগাদ সে বাড়ি ফেরা মাত্র সুব্রতবাবু ফের তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। তখনই পড়ে গিয়ে মাথায় চোট লাগে সুজনের।
মৃত সুজন রায়
শনিবার দুপুরে সুজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে চিকিত্সকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে সুব্রতবাবু মাঝে মধ্যেই মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে পারিবারিক নানা কারণে তিনি ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে মারধর করতেন। কিছু দিন আগে সুব্রতবাবুর মারের জেরে তার ছোট মেয়ের ডান হাতে চিড় ধরে।
সুজনও এর আগে বাবার হাতে মার খেয়েছে। সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে তাই পরিজনদের ক্ষোভ ছিল। শনিবার মালদহ মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা সুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করার পরে পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুব্রতবাবুও ঘাবড়ে গিয়ে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। রবিবার সকালে সৎকারের কাজও শুরু হয়ে যায়। তখনই পুলিশ গিয়ে সুব্রতবাবুকে গ্রেফতার করে।
মলিনাদেবী বলেন, ‘‘আমার বর একমাত্র ছেলেটাকে মারধর না করলে ও অকালে মারা যেত না। ছেলেকে ছাড়া আমি থাকতে পারতাম না। এখন কাকে নিয়ে থাকব।’’ সুব্রতবাবুর দাবি, তিনি ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে সামান্য মারধর করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেলেকে খুন করিনি।’’
(ছবি: গৌর আচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy