E-Paper

আজও তাকিয়ে উত্তরে, উত্তম ধ্রুবতারার খোঁজে

পরবর্তী প্রজন্মের পক্ষে এই নক্ষত্র-রচিত রোমান্টিকতা বোঝা হয়তো একেবারেই অনর্থক। বোঝানোও অপ্রাসঙ্গিক।

অভ্রদীপ ঘটক

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪২
মহানায়ক উত্তম কুমার।

মহানায়ক উত্তম কুমার। —ফাইল চিত্র।

তুমি আমাকে বলো, উত্তম কুমার।’’

কে আর কাকে বলবে বলুন তো! আর বলবেই বা কেন? সব কিছু তো আর টাইম-স্পেস মেনে চলছে না। বাস্তবে এমন কিছুই চলে না। এই সময়টা অন্য।

আমি যদিও আজও তাকিয়ে থাকি উত্তরের দিকে, উত্তমকুমার নামের ধ্রুবতারাটির খোঁজে। এই তাকিয়ে থাকার মধ্যেও একটা মফঃস্বলীয় আদিখ্যেতা রয়েছে, যা নিয়ে নেট-বিশ্ব ‘জেনারেশন মিম’ নামের এক সংকলন আওড়ায়।

পরবর্তী প্রজন্মের পক্ষে এই নক্ষত্র-রচিত রোমান্টিকতা বোঝা হয়তো একেবারেই অনর্থক। বোঝানোও অপ্রাসঙ্গিক। যখন-তখন যেখানে যৌনতার আবেশ পাওয়া যায়, সেখানে চোখে-চোখে কথা বলার গল্প বড্ড খেলো। একসময় হাতে ধরে বাবার কাছে চিনেছি, সপ্তপদীর ওথেলো-কন্ঠ আসলে উৎপল দত্তের। সুপ্রিয়ার সঙ্গে ট্রেন থেকে এক লাফে নেমে গরম চা খাওয়া সহযাত্রী আদতে এক হারানো রাজকুমার-সম। উত্তমকে দেখতে শিখিয়েছেন বাবা-মা। সময়টাও ছিল এমন ধারাই।

‘আমি ময়রা ভোলা, গুরুর চেলা, বাগবাজারে রই’ দিয়ে আর রিল হয় না ধর্মাবতার। এই সময়ে সাদা-কালোর এক অদ্ভুত বৈরাগ্য। অনেকেই সেজেগুজে মদ খেতে যায় মধ্যরাতের ওপার থেকে। মানুষকে পাশের বাড়ি থেকে বিদেশের পাটায়ায় বেশি স্বতঃস্ফুর্ত হতে দেখা যায়।

সাড়ে চুয়াত্তর মানে সর্বকালের নক্ষত্র নামে ট্যাগ করা অ-ফেসবুকীয় আখ্যান মেনে নিয়ে বড় হতে হতে এক দিন দেখতে পাই, বাংলা সিনেমার সংজ্ঞা ঠিক করে দিচ্ছে অবাঙালি এক ফ্রাঞ্চাইজি। বাঙালির মেহেন্দি-সঙ্গীত সম্বলিত প্রি-ওয়েডিং দেখতে দেখতে হঠাৎ ঠোটের কোণায় সিগারেট আর সানগ্লাস পরিহিত ‘অরিন্দম মুখার্জি’র মুখ ভেসে ওঠে মানসে।

স্মার্ট বলতে আমরা ঠিক কাকে বুঝি? ওভার-সাইজে কোরিয়ান নুডুল-খেকো অনেকে আজকাল হামেশাই শুধু ফলো করে চলেছেন, করেই চলেছেন। কাকে? ঠিক ঠাওর হয় না আজকাল।

ফ্যাশন হল মুখোশ, স্টাইল হল মুখশ্রী। অমিতের নেশাই হল স্টাইলে।ঠিক এই স্টাইলের নেশাই ছিল উত্তমেরও। অদ্ভুত ভাবে আমাদের অনেক পূর্ব প্রজন্মের মানুষ স্বত্বেও আমরা খুঁজে নিয়েছিলাম এই প্রাচীন-স্টাইল আইকনকে। যাকে সাদা বাংলায় বলে বুদ্ধিদীপ্ত, সেটাই এখনও মিসিং।

৯০-এর মহানায়ক কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শিখেছে, ‘‘মা আমি চুরি করিনি!’’ এর পরে ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে একে ওপরের পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে নীচে নামতে থাকে। অনেক অনেক নীচে।

জন্ম আশির দশকে আর কর্মে বাবা-কাকাদের মহানায়ক পুষেছি আমরা।আমাদের প্রাচীন প্রজন্ম সেই স্টাইলের মাঝে দোদুল্যমান হয়ে ছিল। তাই তারকা হয়ে মধ্যগগনে ছিলেন আমাদের নায়ক উত্তমকুমার।

আছে, থাকবেও। অন্তত আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত।

পরিচালক, জলপাইগুড়ির বাসিন্দা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tollywood Uttam Kumar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy