Advertisement
E-Paper

ভোর চারটে থেকে দফায় দফায় সাইরেনে ঘুম ভাঙল ত্রিহানার

নিয়ম ভেঙে প্রায় দু’ঘন্টা আগে ভোর ৪টায় দফায় দফায় সাইরেনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল শোভামণি নাগ, সুনিতা টোপনো, বিলাসি বড়াইকদের।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৩

নিয়ম ভেঙে প্রায় দু’ঘন্টা আগে ভোর ৪টায় দফায় দফায় সাইরেনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল শোভামণি নাগ, সুনিতা টোপনো, বিলাসি বড়াইকদের। গত দু’মাস ধরে বাগানের কাজে যাওয়ার সাইরেনের আওয়াজ ভুলে যেতে বসেছিলেন সুনিতাদেবীরা। মঙ্গলবার সকাল ৭টায় তাই দফতরের সামনে জড়ো হয়ে সবুজ আবির মেখে অকাল হোলি, হলুদ গাঁদা ফুল ছিটিয়ে আনন্দে মেতে উঠলেন তরাইয়ের ত্রিহানা চা বাগানের শতাধিক শ্রমিক।

গত সোমবার শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বাগান খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এ দিন সকালে ম্যানেজার বাগানে ঢুকতেই কর্মীরা তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাগানের কারখানা, গুদাম, অফিস-সহ তিনটি ডিভিশনে পুরোদস্তুর কাজ শুরু হয়ে যায়। কাজের ফাঁকেই শ্রমিকেরা জানান, গত দু’মাসের দুর্দশার জীবন যেন কারও জীবনে না আসে। ধারদেনা, বাইরে শ্রমিকের কাজ, আধপেটা খেয়ে থাকার জীবন আর যেন ত্রিহানায় ফিরে না আসে।

বাগান সূত্রের খবর, আজ বুধবার সকালে চুক্তি মেনে প্রত্যেক শ্রমিককে ১ হাজার করে দেবেন কর্তৃপক্ষ। তার পরের শুক্রবার ১৫ দিনের বেতন, মজুরি মিলবে। সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই টাকার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলেন বাগানের ম্যানেজার অম্লান কুসুম গড়াই। প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা বকেয়া মিটিয়ে বিদ্যুতের সংযোগও এদিন ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অম্লানবাবু বলেন, ‘‘অনেকদিন পর বাগানে এসে ভাল লাগছে। শ্রমিক, কর্মীরা কুশল বিনিময় করছেন। আজ ৬টার আগেই সাইরেন বাজানো হয়েছিল। বকেয়া মেটানো, বিদ্যুৎ সংযোগ সব স্বাভাবিক করা হচ্ছে।’’

তিনটি ব্লক, চারটি থানা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ৫০০ হেক্টেরের ত্রিহানা বাগান বছরে প্রায় ১০ লক্ষ কেজি চা পাতা তৈরি হয়। ৮ ডিসেম্বরের বন্ধের দিন থেকে গুদামে প্রচুর চা পাতা মজুত ছিল।

এদিন সকাল থেকে শকল খেরোয়ার, অরুণ টপনোরা কারখানায় কাজ শুরু করে শিলিগুড়ি চা পাতা পাঠানোর কাজেও হাত দেন। এ দিন সকালে বাগানে যান তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের জেলার কার্যকরী সভাপতি নির্জল দে। বাগানের ম্যানেজার থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলে বাগানের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রেখে কাজ করার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করেন। নির্জলবাবু বলেন, ‘‘বাগান খুলল এটাই বড় ব্যাপার। শ্রমিকদের অবস্থা আর চোখে দেখা যাচ্ছিল না।’’

স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ২২০০ শ্রমিকেরা বাগান বন্ধ হতে অনেকেই সংসারের হাঁড়ি টানতে নদীতে পাথর ভাঙা, রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজে যোগ দেন। সরিতা ওরাওঁ, লক্ষ্মী রউতিয়া রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করছিলেন। তেমনই, অণিমা রউতিয়া, জিতনি নাগাসিয়া পাথর ভাঙার কাজে যোগ দিয়েছেন।

তাঁরা জানান, সরকার থেকে চাল, কম্বলের সামান্য সাহায্য পেয়েছিলেন। তা দিয়ে কী সংসার চলে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফি, হাটেবাজারের বাকি শোধ করতে বাগান ছাড়তে হয়েছিল। এ দিন অনেকেই বাইরের কাজ ছেড়ে আসতে পারেননি। বিকাল থেকে অন্য শ্রমিকেরাই তাঁদের দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার কথা জানান। আপাতত কারখানা, বাগানের গাছ ছাঁটাই এবং সেচের কাজ চলবে ত্রিহানায়।

Tea Garden Trihana Reopened
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy