উত্তরের চা-বাগান। — নিজস্ব চিত্র।
সবুজ চা-পাতাগুলো সাদা রঙের হয়ে যায় শীতকালে। কত যুগ যুগ ধরে শীতকালের গর্ভে নতুন বছর জন্ম নেয়। ফেলে আসা বছর কি প্রিয় ছিল, না কি নতুন বছর প্রিয়তর হবে? শীতকালে চা-গাছের পাতগুলো সাদা রঙের হয়ে যায়। সে বর্ণের অন্তরে লুকিয়ে থাকে হিম। শীতের আসার খবর জানিয়ে দিয়ে প্রথমে হিম পড়ে। শরতকালের হিম! সে হিম জমে জমে পাতা ভারী হয়। ধীরে ধীরে হেমন্ত আসে। বাতাস শুকিয়ে যায়। ধুলো ওড়ে। সে ধূলিকণা আশ্রয় নেয় চা-পাতায়। ধুলো জমে, জমে, জমতে থাকে। শুভ্রতা জন্মায়। তবে সব চা-বাগানের পাতায় ধুলো জমে না, হিম জমতে পারে না।
যে বাগান বন্ধ, যে বাগানের চা-পাতার যত্ন হয় না, সেখানেই যত ধুলো জমে। ক্যালেন্ডার পাল্টায়, বছর ঘোরে। কিন্তু চা-পাতার ধুলো উড়ে যায় না কিছু বাগানের। কিছু শ্রমিকের বাড়ির জরাজীর্ণ চালের ফুটো দিয়ে হিম পড়তেই থাকে বছরের পরে বছর। এ ছবি এখন একঘেয়ে। দুঃখী মুখমণ্ডলের সন্ধানে বন্ধ, ধুঁকতে থাকা চা-বাগানের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায় কত-শত আধুনিক দুর্মল্য ক্যামেরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির প্রতি বছরের ত্রাণ বিলির নির্বিবাদী সহজ ঠিকানা হয়ে যায় বন্ধ চা-বাগান। বছর বদলাতে থাকে, ত্রাণের ঠিকানা বদলায় না।
শীতকাল চা-গাছের যত্নের কাল। চা-গাছের মাথা কেটে ফেলা হয় শীতে। সুখা সময়ে বাতাসে রস থাকে না। চা-গাছের মাথা কেটে ফেলার পরে ধীরে ধীরে গাছ বাড়তে থাকে। বসন্তকালে নতুন পাতা আসে। কিন্তু যে বাগান বন্ধ, সেখানে গাছ কাটা হয় না। পুরনো চা-পাতায় হিম পড়তে থাকে। তার পরে জমে ধুলোর পরত। তার পরে কুয়াশা। চা-পাতা সাদা রঙের হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ফুল ফোটে। চা-গাছের হলুদ রঙের ফুল। নাকছবি হারিয়ে যায় হলুদ বনে বনে। সে ভাবেই সুখ হারিয়ে যায় হলুদ ফুলের চা-বাগানে। কথায় বলে, যে চা-গাছে ফুল ফোটে, সে গাছ জনমদুখী, আদর-যত্ন নাপেয়ে মনমরা।
চা-গাছের পরিচর্যা হলে ফুল ফোটার সুযোগই আসে না। যত্ন পেলে আগেই গাছের ডাল ছেটে দেওয়া হত। সে বাগান শ্রমিকদের মুখেহাসি ফোটাত। আর বন্ধ বাগানে শ্রমিকদের খিদে মেটায় হলুদচা-ফুল। সে ফুল ভেজে শ্রমিকেরাসেদ্ধ ভাতে মেখে খান। গরমভাতের সঙ্গে চা-ফুল ভাজার গন্ধ চর্তুদিকে জিজ্ঞাসা ছড়িয়ে দেয়— আরও একটা নতুন বছর! সুখআসবে কবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy