Advertisement
০২ মে ২০২৪
National Master's Games

আঠারো বছর পরে মাঠে ফিরে জাতীয় স্তরে পাঁচ পদক

ইংরেজবাজার শহরের সিঙ্গাতলার বাসিন্দা সুপ্রিয়া। শহরের এক ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষিকা। স্বামী রাজু ঘোষ পুলিশকর্মী। দুই ছেলেমেয়ে— নবম ও একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

গোয়ায় পদক নিয়ে সুপ্রিয়া দাস ঘোষ।

গোয়ায় পদক নিয়ে সুপ্রিয়া দাস ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৩
Share: Save:

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় মারা যান বাবা। মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকে একাদশে উঠতেই হয়ে যায় বিয়ে। অধরা থেকে যায় অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন। তবে স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান আর পুলিশকর্মী স্বামীর উৎসাহে ১৮ বছর পরে, মাঠে নেমে বাজিমাত করলেন মালদহের সুপ্রিয়া দাস ঘোষ। গোয়ায় আয়োজিত ‘ন্যাশনাল মাস্টার্স গেমস’-এ পাঁচটি পদক পেয়েছেন তিনি। তাঁর সাফল্য পরিবারের সঙ্গে খুশি জেলার ক্রীড়ামহলও।

ইংরেজবাজার শহরের সিঙ্গাতলার বাসিন্দা সুপ্রিয়া। শহরের এক ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষিকা। স্বামী রাজু ঘোষ পুলিশকর্মী। দুই ছেলেমেয়ে— নবম ও একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রিয়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা মারা যান। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বড়দির বিয়ে হয়ে যায়। নিজে যখন একাদশ শ্রেণিতে, তখন বিয়ে হয় সুপ্রিয়ার। ফলে, অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন ছুঁতে পারেননি তখনই। শ্বশুরবাড়ির সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। গৌড় মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক। পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও, এত দিন মাঠে নামা হয়নি তাঁর।

দীর্ঘ ১৮ বছর পরে, মাঠে ফেরেন বছর পঁয়ত্রিশের সুপ্রিয়া। দু’মাস আগে শিলিগুড়ি এবং হলদিয়ায় ‘স্টেট মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স মিট’-এ অংশ নিয়ে ৪০০, ৮০০ মিটার দৌড় এবং পাঁচ হাজার মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় পদক পান। সোমবার গোয়ায় ‘ন্যাশনাল মাস্টার্স গেমস’-এ পাঁচ হাজার মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়, ১,৫০০ মিটার দৌড়ে প্রথম, ৪০০ মিটার রিলে রেসে দ্বিতীয়, ৮০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় হয়ে পদক জিতেছেন তিনি।

গোয়া থেকে মালদহের বাড়িতে ফিরে সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘অভাবের কারণে অ্যাথলিট হওয়া হয়নি আগে। তবে ইচ্ছে ছাড়িনি। শরীরচর্চায় সাফল্য পেয়েছি। আন্তর্জাতিক মাস্টার্স গেমসেও ডাক পেয়েছি।’’ তাঁর মা সুষমা দাস এ দিন বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে, ছেলেমেয়েদের নিয়ে কী করব, বুঝে উঠতে পারিনি। নাবালিকা অবস্থাতেই মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলাম। এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছি!’’ সুপ্রিয়ার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে স্কুল গেমসের মালদহ জেলার সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন খেলোয়াড় শান্তনু সাহা বলেন, ‘‘সুপ্রিয়ার লড়াই আর সাফল্যে অনেকে আরও উৎসাহিত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Goa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE