মিছিল: জলপাইগুড়িতে বিজেপির মিছিল। নিজস্ব চিত্র
নেতারা আছেন, জেলা থেকে মণ্ডলের পদাধিকারীরা আছেন, জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন। কিন্তু কর্মী-সমর্থকরা কোথায়? জলপাইগুড়ি লোকসভায় বিপুল ভোটে জিতেছে বিজেপি। অথচ লোকসভা ভোটের চার মাস পরে দলের প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচিতে কর্মী-সমর্থকদের দেখা সে ভাবে পাওয়া গেল না বলে দাবি উঠেছে দলেই। বিজেপির জেলাওয়াড়ি গাঁধী সংকল্প যাত্রার জলপাইগুড়ির মূল কর্মসূচি বুধবার দুপুরে গোশালা মোড় থেকে শুরু হয়। সরকারি রিপোর্টে এ দিনের মিছিলে একশো জনের বেশি লোক ছিল না। যাঁরা এ দিনের কর্মসূচিতে হাজির হয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই হয় নেতা, না হলে দলের পদাধিকারী, দাবি করেছে দলেরই একাংশ। তা হলে কর্মী-সমর্থকেরা অনুপস্থিত কেন? বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটের পরে দলের সংগঠনের হালও দেখিয়ে দিল এই যাত্রা। ভিড় যে কম, তা মেনে নিয়েছেন সাংসদ জয়ন্ত রায়ও।
মাস চারেক আগেই জলপাগুড়ি লোকসভায় প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়। সে প্রসঙ্গ তুলে ভিড় নিয়ে জানতে চাইলে সাংসদ বলেন, “সব জায়গাতেই মিছিল হবে। যেখানে যখন মিছিল থাকবে সেখানকার কর্মীরা থাকবেন।” বিজেপি সূত্রের কিন্তু খবর, জেলার সর্বত্র এমন মিছিল হওয়ার কথা নেই। প্রতিটি বিধানসভা ছুঁয়ে যাওয়া হবে। এ দিন মিছিল হয়েছে জলপাইগুড়ি এবং রাজগঞ্জ দু’টি বিধানসভা নিয়ে। দুই বিধানসভা থেকে একশোরও বেশি কর্মী-সমর্থক জড়ো করতে না পারায় দায় নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষও তৈরি হয়েছে। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের দলের সকলেই কর্মী। তাই কর্মীরা নেই, এ কথা ঠিক নয়।”
নেতারা মুখে যাই বলুন, এ দিনের ঘটনা নিয়ে দলের অন্দরে কাঁটাছেড়া চলছে। লোকসভা ভোটের পরে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলা। তা হলে সংগঠনের এই অবস্থা কেন, স্বাভাবিক ভাবে সে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, লোকসভা ভোটে দেশপ্রেম-সহ নানা আবেগ কাজ করেছে। সেই আবেগেই বাসিন্দারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। তার জন্য দলের সংগঠনকে কোনও কৃতিত্ব দিতে রাজি নয় কর্মীদের একাংশ। উপরন্তু ভোটের সময় সঙ্ঘ পরিবার পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। সে সুফলও বিজেপি স্থানীয় ভাবে পেয়েছে। ভোটের পরে এ দিন প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ফের সংগঠনের ঢিলেঢালা চেহারা বেরিয়ে এসেছে বলে দলের কর্মীরাই মনে করছেন।
ভোটের পরে দলের জেলা নেতাদের অনেকেরই হাবভাব-কথাবার্তা বদলে যায় বলে অভিযোগ। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগও তলানিতে ঠেকে। সেই সঙ্গে এনআরসি নিয়ে বিরোধীদের প্রচারের মোকাবিলা করতে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের বুঝিয়ে সামিল করার প্রয়োজন ছিল বলে গেরুয়া শিবিরের নেতারা মনে করেন। এ দিন গোশালা মোড়ে দাঁড়িয়ে এক জেলা নেতার কথায়, “এ দিনের কর্মসূচির কথা কর্মীদের জানানোই হয়নি। কেউ কেউ ভেবেছিল, কর্মীরা এমনিতেই চলে আসবেন। তা যে ভুল, প্রমাণ হল।”
এ দিনের মিছিলের শেষে বিজেপির পতাকা লাগানো বেশ কিছু টোটো রাখা হয়েছিল। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। মিছিলের ভিড় দেখে সেই টোটোগুলিকে ছেড়ে দিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy