Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৩
রাতের শহর

সন্ধে নামতেই আঁধার রাস্তা, নির্জনে আতঙ্ক

মহিলারাই জানালেন, রাতের বেলা টোটো, অটো বা গাড়ি কোনওটাই একা মহিলার কাছে নিরাপদ নয়। তিন বছর আগে এই রথবাড়ি মোড় সংলগ্ন একটি শপিং মলের কাছ থেকে এক মহিলাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে পুরাতন মালদহের একটি গ্রামের নির্জন এলাকায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল।

ভয়ে-ভয়ে: ইংরেজবাজারের পথে। নিজস্ব চিত্র

ভয়ে-ভয়ে: ইংরেজবাজারের পথে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা। ইংরেজবাজার শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা রথবাড়িতে তখন বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করেছে। রথবাড়ির গাজল-চাঁচল বাসস্ট্যান্ডটি আলো-আঁধারি হয়ে আছে। বেশ কয়েকটি অটো, টোটো, ম্যাজিক গাড়ি রথবাড়ি মোড়ে দাঁড়িয়ে। কোনওটা যাবে পুরাতন মালদহ শহরে, কোনওটা সাহাপুরে। আবার বামনগোলাগামী ম্যাজিকও রয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে মহিলারাই বেশির ভাগ তখন বাড়ি ফেরার জন্য সেই টোটো বা অটো ধরতে আসছেন। তরুণী থেকে শুরু করে মাঝবয়সী মহিলাই বেশি। কেউ শহরে শপিংমলের কর্মী বা কেউ নার্সিংহোমে কাজ করেন, কেউ আবার হোটেলে রান্না ও বাসন ধোয়ার কাজও করেন। তবে টোটো বা অটো চালকরা ডাকলেও তাঁরা উঠছেন না সহজে। দেখে নিচ্ছেন পুরুষ কোনও যাত্রী উঠছেন কিনা বা পরিচিত কেউ আছেন কি না। কিন্তু কেন?

মহিলারাই জানালেন, রাতের বেলা টোটো, অটো বা গাড়ি কোনওটাই একা মহিলার কাছে নিরাপদ নয়। তিন বছর আগে এই রথবাড়ি মোড় সংলগ্ন একটি শপিং মলের কাছ থেকে এক মহিলাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে পুরাতন মালদহের একটি গ্রামের নির্জন এলাকায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল। সম্প্রতি হায়দরাবাদে এক মহিলা পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। ধানতলাতে প্রায় একই ভাবে এক মহিলাকে খুন করা হয়েছে।

পুরাতন মালদহ শহরের ফুটানি মোড়ের বাসিন্দা রুম্পা দাস নামে এক শপিংমল কর্মী বলেন, ‘‘একা টোটোয় চেপে বাড়ি ফিরতে ভয় হয়। বিশেষ করে হায়দরাবাদের পর আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে। তাই সাবধানে, বুঝে টোটোয় উঠি। রথবাড়ি মোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশের সদর দফতর থাকলেও এই দিকটায় রাতের দিকে পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে দু’-এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার এসে ঘুরে যায়।’’

শহরের একটি নার্সিংহোমের কর্মী সুলেখা বসাক বলেন, ‘‘রথবাড়ি থেকে টোটো বা অটোয় করে বুলবুলি মোড় পর্যন্ত সাধারণ ভাবে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বুলবুলি মোড় থেকে সাহাপুরের পথে আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে। রাত সাড়ে ৯টার পরে ওই রাস্তায় আর সে ভাবে লোক চলাচল করে না। পুলিশের টহলদারিও থাকে না। এর আগে বেশ কয়েক বার কিছু যুবক বাইক নিয়ে পিছু ধাওয়া করেছিল। মাঝেমধ্যেই করে। কিন্তু সে সময় রাস্তায় জানানোর মতো কেউ থাকে না। একা অটোচালকেরও কিছু করার থাকে না। ফলে ভয় হয়।’’

এ দিকে ইংরেজবাজার শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মার্কেটে একাধিক কসমেটিকসের দোকানে সেলসের কাজ করেন অনেক মহিলাই। রাত সাড়ে ৯-১০টার সময় তাঁরাও বাড়ি ফেরেন। সেলস কর্মী অনুরাধা সিংহ বলেন, ‘‘বাঁধ রোডে আমার বাড়ি। আমরা যা বেতন পাই তাতে টোটোয় করে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। হেঁটেই যাই। রাতে বাড়ি ফেরার সময় টাউন হলের পিছনে বাঁধ রোডের রাস্তা ধরে যাতায়াত করা যায় না। টাউন হল থেকে পুলিশ সুপারের বাংলো পর্যন্ত বাঁধ রোডটিতে পর্যাপ্ত আলো নেই, সন্ধের পর থেকেই নির্জন হয়ে যায়। সুপারের বাংলো পার করার পরে আশপাশে বাড়ি থাকলেও গোটা রাস্তাটা কার্যত নির্জন থাকে। রাতে পুলিশের টহলদারি থাকে না। ফলে আতঙ্ক নিয়েই ফিরতে হয়।’’

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাত ৯টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শহর জুড়ে তিনটে পুলিশ মোবাইল ভ্যান টহল দেয় মূল রাস্তাগুলিতে। সাদা পোশাকে আটটি বাইকে পুলিশ কর্মীরা টহলদারি করেন বিভিন্ন পাড়ার গলিতে। রথবাড়ি মোড়, ফোয়ারা মোড়, বিনয় সরকার মূর্তি মোড়, সুকান্ত মোড়, কানির মোড় সহ একাধিক পয়েন্টে রাত ৯টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়াররা মোতায়েন থাকেন। ফলে পুলিশি নজরদারি নেই এ কথা মানতে নারাজ তারা। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘গোটা জেলায় হেল্পলাইন নম্বর চালু রয়েছে। সেই নম্বর হল ৯৭৩৩০-২২০০২। কোনও মহিলা রাত-বিরেতে ওই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করলেই পুলিশ পদক্ষেপ করবে। শহর ও জেলা জুড়ে রাতে পুলিশি টহলদারি জোরদার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE