Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুরুষদের সমান মজুরির দাবি মহিলা খেতমজুরের

এটা কেবল তপন ব্লকই নয়। সমান কাজ করেও মহিলা শ্রমিকের অর্ধেক মজুরি মেলার ছবিটা দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি থেকে কুমারগঞ্জ ব্লকের প্রায় সর্বত্র।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

খেতমজুর স্বামীর একা রোজগারে সংসার চলে না। কাঁধ মিলিয়ে নমিতা বর্মনকে সকালে ছুটতে হয় ধান রোয়ার কাজে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা এলাকার বিপিএলভুক্ত নমিতাদেবীর মত স্থানীয় আউটিনা এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলেনেত্রী, বিধবা পূর্ণিমা সরকারকে সংসার টানতে মাঠের কাজে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান তালে দিনভর কাজ করে যেতে হয়। জমি থেকে সর্ষে তোলা ও ঝাড়াই বাছাইয়ের পর পশ্চিমে সূর্য ঢলে গেলে তবেই হাতে মেলে মজুরি বাবদ মাত্র ১০০ টাকা। পুরুষ খেতমজুরদের জন্য বরাদ্দ মজুরি কিন্তু ২০০ টাকা।

এটা কেবল তপন ব্লকই নয়। সমান কাজ করেও মহিলা শ্রমিকের অর্ধেক মজুরি মেলার ছবিটা দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি থেকে কুমারগঞ্জ ব্লকের প্রায় সর্বত্র। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারীদিবসের দিনে নারীর অধিকার নিয়ে নানা অনুষ্ঠান, দাবি, স্লোগান যেন প্রত্যন্ত ওই সমস্ত এলাকার বিস্তীর্ণ চাষ জমির ধুলোয় চাপা পড়ে যায়। এ দিনও যথারীতি জেলা শ্রম দফতর থেকে শাসক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব মজুরির বৈষম্য রোধে পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু ফিবছর নারীদিবস আসে। আবার চলেও যায়। সেই আশ্বাসে অবশ্য হাল ফেরে না সারা বছর রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠঘাটের কাজে নিয়োজিত তপনের হরসুরার বুলবুলি বর্মন কিংবা কুমারগঞ্জের মোহনা এলাকার চাষি বউ অর্চনা মুর্মু, বিউটি বর্মনদের।

তাঁদের কথায়, জমির মালিককে কিছু বলা যায় না। ১০০ টাকায় কাজ করতে হলে কর, নইলে কাজ করতে হবে না, সাফ জবাব তাঁদের। এলাকায় ১০০ দিনের কাজও নেই। রোজগারের আর কোনও উপায় না দেখে বাধ্য হচ্ছেন কম মজুরিতে কাজ করতে। তা না হলে রোজগার হারানোর বিপরীত আশঙ্কার ছবিটা দেখেছেন তপনের খলসি এলাকার খেতমজুররা। তা কেমন?

সম্প্রতি জমিতে ধান ঝাড়ার মেশিন এনে ঝাড়াইয়ের কাজ শুরুর উদ্যোগ হলে এলাকার খেত মজুররা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। শেষপর্যন্ত খেত মজুরদের দাবি মেনে চুক্তিভিত্তিক মজুরির প্রদানের শর্তে ঝাড়াইগাড়ি ফেরত পঠিয়ে শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়। তবে অনেকেই মেনে নিয়েছেন, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। কী করে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যও নেওয়া যায়, আর কারও কাজও না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরএসপির সংযুক্ত কিসানসভার জেলা সম্পাদক সাজাহান সর্দারের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের তরফে নজরদারির অভাবে মহিলা খেত মজুররা চরম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত মজুরিও খেতমজুররা পাচ্ছেন না। বহুবার প্রশাসনের কাছে দাবি, আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।

জেলা সহ শ্রম কমিশনার শৈবাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমকাজে সম বেতন ও মজুরি দিতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা নেতা বিপ্লব মণ্ডলও আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘খেত মজুরদের সরকারি মজুরির ধার্য রয়েছে ২৪২ টাকা। সে ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক বলে কোনও ভাগ নেই। আমরা পদক্ষেপ নেব।’’

সেই দিকেই তাকিয়ে অর্চনারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE