Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
নিশিদিন এই জীবনের তৃষার ’পরে ভুখের ’পরে।
Women workers

সমকাজে মজুরিতে বঞ্চিতই মহিলারা

ধানকাটা থেকে আলু বোনার পরে পশ্চিমে সূর্য ঢলে গেলে মজুরি বাবদ হাতে মেলে মাত্র ১৭০ টাকা। অথচ পুরুষ খেত মজুরদের বরাদ্দ মজুরি ২৬০ টাকা। 

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৪৭
Share: Save:

খেত মজুর স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না। কাঁধ মিলিয়ে মেরি হাঁসদাও সকালে ছোটেন ফসল বুনতে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের আউটিনা অঞ্চলের বিপিএলভুক্ত বাসিন্দা মেরির মতো ওই এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলেনেত্রী বিধবা পূর্ণিমা সরকারও সংসার টানতে মাঠের কাজে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান তালে দিনভর কাজ করে যান। ধানকাটা থেকে আলু বোনার পরে পশ্চিমে সূর্য ঢলে গেলে মজুরি বাবদ হাতে মেলে মাত্র ১৭০ টাকা। অথচ পুরুষ খেত মজুরদের বরাদ্দ মজুরি ২৬০ টাকা।

দীর্ঘ লকডাউনে প্রায় কর্মহীন হয়ে কাটানোর পরে রবিশস্য চাষের মরসুমে মাঠের কাজ মিললেও সমকাজে মহিলা খেতমজুরদের কম মজুরি মেলার ছবিটা দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে হরিরামপুর—প্রায় সব ব্লকেই এক বলে অভিযোগ। বিধানসভা ভোটে প্রাক্কালে নারীর অধিকার নিয়ে শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, স্লোগান ও বক্তৃতায় চারদিক সরগরম হয়ে উঠছে। কিন্তু সারাবছর রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠঘাটের কাজে যুক্ত হরিরামপুর ব্লকের অঞ্জনা মুর্মু বা কুমারগঞ্জের মোহনা এলাকার খেতমজুর অর্চনা মুর্মু, শ্যামলী বর্মণদের মজুরি বৈষম্য ঘোচেনি।

ওঁদের কথায়, "জমির মালিককে কিছু বলা যায় না। ওই মজুরিতে পোষালে করো, নইলে কাজ করতে হবে না, সাফ জবাব তাদের।" এলাকায় ১০০ দিনের কাজও নেই। রোজগারের আর কোনও উপায় না দেখে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন কম মজুরিতে কাজ করতে। আর পুরুষ শ্রমিকদের অনেকে অপেক্ষাকৃত বেশি মজুরির আশ্বাসে পাড়ি দিচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে। তপনের খলসি এলাকার খেতমজুর আলি মণ্ডল, মজিবর মণ্ডলরা জানান, নতুন ধান উঠলেও বেশির ভাগ জমিতে মেশিন এনে ধান ঝাড়াই করা হয়। ফলে তাঁদের মজুরিতে কোপ পড়ে।

আরএসপির সংযুক্ত কিসানসভার জেলা সম্পাদক সাজাহান সর্দারের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের তরফে নজরদারির অভাবে মহিলা খেত মজুররা চরম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। মজুরির সঙ্গে খাবার চুক্তি থাকলেও মহিলা মজুররা বঞ্চিত। মজুরির টাকার সঙ্গে পুরুষ খেতমজুরদের দুপুরে পান্তা বা গরম ভাত দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে জমির মালিকদের দুপুরের জলখাবারে বরাদ্দ শুধু মুড়ি। মজুরি বৈষম্য নিয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে দাবি, আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।

জেলা লেবার কমিশনার দফতর সূত্রের খবর, আগে মাঠে ঘুরে মিনিমাম ওয়েজ ইন্সপেক্টাররা খেতমজুরদের মজুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখতেন। এখন ওই পদে কেউ নেই। জেলা উপশ্রম কমিশনার তপন হালদার বলেন, "লিখিত অভিযোগ হলে খতিয়ে দেখা হবে।" তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি মজিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, "খেত মজুরদের মজুরি ধার্য রয়েছে প্রায় ৩০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক বলে কোনও ভাগ নেই। আমরা পদক্ষেপ করব।"

অন্য বিষয়গুলি:

Women workers Wage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE