Advertisement
E-Paper

করোনা-চিন্তা দুই জেলাতেই

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হোম কোয়রান্টিনে রাখছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৪:২৯
ঘরের পথে: পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফিরছে বাস। ছবি: সজল দে

ঘরের পথে: পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফিরছে বাস। ছবি: সজল দে

গত কয়েক দিন ধরে জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার সংখ্যা বাড়ছে। পরীক্ষার জন্য নিয়মিত তাদের লালারসের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানোও হচ্ছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে রিপোর্টের পাহাড় জমতে শুরু করায় তাদের বেশিরভাগেরই করোনা পরীক্ষার ফল জানতে এক সপ্তাহেরও বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার জেরে কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা ওই শ্রমিকদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে, তাঁর সংস্পর্শে এসে আরও অনেকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে খোদ স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে। জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, রিপোর্ট দ্রুত পেতে প্রতিদিনই মেডিক্যাল কলেজে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হোম কোয়রান্টিনে রাখছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশ মেনে প্রত্যেকের কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেই সঙ্গে বাধ্যতামূলক করা হয় তাঁদের লালরসের নমুনা পরীক্ষাও। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে করোনা পরীক্ষার জন্য কিটের সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু পরে তা পর্যাপ্ত সংখ্যায় আসতে শুরু করে। ফলে জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহের গতিও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে সেই রিপোর্ট আসতে টানা অপেক্ষাই এখন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে শিলিগুড়িতে আলিপুরদুয়ার জেলার প্রায় দু’হাজার লালারস নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট জমে গিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ১০ মে ভ্যাকসিন নিয়ে কলকাতা থেকে একটি গাড়ি আলিপুরদুয়ারে এসেছিল। পরদিন সেই গাড়ির চালক ও খালাসির লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তারও সাত দিন পর ১৮ মে যখন রিপোর্ট আসে হাতে, তখন দেখা যায়, চালকের শরীরে করোনার সংক্রমণ রয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, লালারসের নমুনা দেওয়ার পরই ওই চালক কলকাতায় ফিরে গিয়েছেন। ফলে তাঁর মাধ্যমে এই জেলায় করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা ততটা ছিল না। কিন্তু কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা যাঁদের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে, তাঁদের কারও রিপোর্ট পজ়িটিভ হলেই সবচেয়ে চিন্তার। কারণ টানা সাত-আট দিনে তাঁদের থেকে ওই কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা আরও অনেকের শরীরে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আলিপুরদুয়ারের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী অবশ্য বলেন, ‘‘লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট যাতে দ্রুত পাওয়া, সেই চেষ্টা জারি রয়েছে।’’

নমুনার ফল কই

শ’য়ে শ’য়ে লালারসের নমুনা যাচ্ছে পরীক্ষার জন্য। কিন্তু রোজ এত রিপোর্ট আসছে কোথায়? অথচ, কোচবিহারের পরিস্থিতি বিচার করলে পরীক্ষায় গতি আসা উচিত, বলছেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরাই। এর ফলে বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ জমা হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা মানুষের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। প্রচুর বাস-ট্রাক পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে জেলায় ফিরছে। পাঁচটি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনও পৌঁছেছে। ওই শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই রেড জ়োন থেকে ফিরেছেন। তার মধ্যে যেমন কলকাতা রয়েছে, তেমনই রয়েছে মুম্বই। অনেকেই আবার হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিযায়ীদের লালারস পরীক্ষা দ্রুত হওয়া দরকার।

কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “দ্রুততার সঙ্গেই লালারস পরীক্ষা হচ্ছে। রিপোর্টও পাচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এই অঞ্চলের পাঁচ জেলার লালারস পরীক্ষা হচ্ছে একমাত্র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরিতে। তাই একটু দেরি হচ্ছে।” তাঁর কথায়, সেখানে এক দিনে ৮০০ জনের মতো লালারস পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই কোচবিহারের রিপোর্ট একটু দেরিতে আসছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্টেই দেখা যায়, গত ছ’দিনে ৫২৬ জনের লালারসের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ১৯ মে ৫২৪ জনের রিপোর্ট পাওয়া যায়। পরদিন ৩ জনের রিপোর্ট পাওয়া যায়। বাকি চার দিন কোনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। অথচ গত ছ’দিনেই কয়েক হাজার মানুষ ফিরেছেন জেলায়। তার মধ্যে মহারাষ্ট্র, কলকাতা থেকে চারশো জনের উপরে মানুষ ফিরেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ২০ তারিখের কোভিড বুলেটিন কোচবিহারে জানানো হয়েছে, ওই দিন পর্যন্ত মোট ৪৫৮৯ জনের পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ৩২০১ জনের রিপোর্ট হাতে এসেছে। প্রত্যেকের রিপোর্ট নেগেটিভ। ১৩৮৭ জনের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। বর্তমানে কোয়রান্টিনে আছেন ১৪৫১ জন এবং হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন ১৬৭৮৮ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার মুম্বই থেকে ফেরার পথে রাস্তায় মৃত বাংলাদেশের এক তরুণের লালারসের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাঁকে মৃত অবস্থায় কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁর লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলায়।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy