ক্ষুর চালিয়ে তিনজনকে জখম এবং মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্কন মন্দির রোডে। যাঁদের মারধর করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে তৃণমূল কর্মীও রয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের ওয়ার্ড সম্পাদক রঞ্জিত রায় ওরফে বেঙাই। এছাড়া আরও তিনজন তৃণমূল কর্মীর নামে ভক্তিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বেঙাই ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিন অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে দার্জিলিং জেলা বিজেপি যুব মোর্চার পক্ষ থেকে ভক্তিনগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অপরাধী গ্রেফতার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে হুমকি দেন তাঁরা। এদিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও তাঁদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে অভিযোগকারীরা, জানিয়ে ভক্তিনগর থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “ঘটনা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, রঞ্জিত রায়, চিত্রজিত্ বর্মন, রূপক দে এবং শত্রুঘ্ন প্রসাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে ইস্কন মন্দির রোড এলাকা হয়ে শাস্ত্রীনগরে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন গাড়ি চালক রোহিত রায়। সেই সময়ে রাস্তার মাঝখানে বসে বেঙাই কয়েকজনকে নিয়ে মদ্যপান করছিছলেন বলে অভিযোগ। রাস্তা থেকে সরার জন্য বারবার গাড়ির হর্ন বাজানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা কয়েকজন রোহিতের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
এই খবর পেয়ে রোহিতের ভাই সতু এবং তার কয়েকজন বন্ধু দাদাকে বাঁচাতে ছুটে যান।। তাঁদেরও বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারে বেঙাই ও তার সঙ্গীরা। রোহিত বলেন, “ভাই ও তাঁর বন্ধুরা বাধা দিতে গেলে ওঁর উপরে ক্ষুর নিয়ে চড়াও হয় বেঙাই, রূপক, শত্রুঘ্নরা। আমি নিজেও তৃণমূল করি বলে জানিয়ে ওঁদের হাত জোড় করে ছেড়ে দিতে বলি, তা সত্ত্বেও তাঁরা ক্ষুর চালিয়ে দেয়।” গুরুতর জখম আনন্দ পাশওয়ানের গলায়, পেটে হাতে ক্ষুরের আঘাত রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি শুধু বন্ধু সতুর সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমার উপরে হঠাত্ চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি ক্ষুর চালাতে থাকে।” সতুরও হাত ভেঙে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গোটা ঘটনাটাই মিথ্যা এবং সাজানো বলে দাবি করেছেন, অন্যতম অভিযুক্ত বেঙাই। সে বলে, “ওঁরাই আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙতে এসেছিল। আমরা বাধা দিলে ওঁরা আমাদের উপরে চড়াও হয়। আমরা কাউইকে মারিনি। কীভাবে ওঁদের চোট লাগল তা বলতে পারব না।” তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ পাল বলেন, “বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস মিলে আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। উল্টে আমাদের নামেই মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমরাও দলীয় কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ দায়ের করেছি।”
বিজেপি যুব মোর্চার শিলিগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা চৌধুরী বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। না হলে আন্দোলন শুরু করব।” কৃষ্ণবাবুর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকার বলেন, “এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে। নিজেরাই অপরাধ করছে উল্টো আমাদের কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাচ্ছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু অবশ্য তৃণমূলকে অপরাধীদের দল বলে অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, “সারা রাজ্যেই শীর্ষনেতাদের মদতে তৃণমূলিরা সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। শিলিগুড়িও তার ব্যতিক্রম নয়। এর জবাব তারা আসন্ন নির্বাচনগুলিতে পাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy