কর ছিল ৯০ টাকা। এখন তাই বেড়ে হয়েছে ৭৫০ টাকা। কারও আবার ছিল ১৪০ টাকা। তা বেড়ে হয়ে গিয়েছে ১০৫০ টাকা বর্ধিত হারে। নতুন পুরকরের নোটিশ দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছেন মালবাজারের বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা, নতুন করে জরিপ করে ফের কর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
চলতি মাসের গোড়া থেকেই নতুন হারে পুরকরের নোটিশ বন্টন শুরু হয়েছে মালবাজারে। শহরের ১৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পুরকর্মিদের হাত থেকে নোটিশ পেয়েই ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ, আগের পুরকরের থেকে এ বারের কর ৭ থেকে ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন, “গত ২০০৭ এর পর মালবাজারে আর নতুন হারে কর প্রয়োগ হয়নি। কয়েক বছর ধরেই নতুন হারে কর তৈরির কাজ চলছিল। যেহেতু অনেক বছর নতুন হার প্রয়োগ হয়নি। তাই এ বারের কর বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়লে তাও খতিয়ে দেখা হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়েষ্ট বেঙ্গল ভ্যালুয়েশন বোর্ড বা রাজ্য মূল্য নির্ধারণ বোর্ডের তরফে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। তা পাওয়ার পরে দু’মাসের মধ্যে বাড়তি কর নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে মালবাজার পুরসভায় জমা দেওয়া যাবে। আদপে তাতে সমস্যার কোনও সমাধান হবে কি না তা নিয়েই শঙ্কায় বাসিন্দারা। মালবাজারের রাজাপাড়ার বাসিন্দা স্বপন ঘোষের ক্ষোভ, “আগে পুরকর ছিল বছরে ২৯৬ টাকা। এ বারে তাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১৮ টাকা।”
কেবল বাসিন্দারা নন, বর্ধিত হারের কোপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। মালবাজারের ব্যবসায়ী মোহিত শিকদারের দোকান ঘরের পুরকর এতদিন ছিল ৫৪ টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৫৮৪ টাকা। মোহিতবাবুর বাড়ি উত্তর কলোনিতে। সেই বাড়ির পুরকর ছিল ২০০ টাকা। এ বারের নতুন নোটিশে তা বেড়ে হয়েছে ১২৭৮ টাকা। মোহিতবাবু বললেন, “এই কয়েক বছরে মালবাজার শহর তো এমন কিছু বড় হয়ে যায়নি। সে জন্যে আমাদের এত গুণ বেশি পুরকর দিতে হবে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।”
রাজ্য মূল্য নির্ধারণ কমিটির তরফে পুরকর্মিরা গত তিন বছর ধরেই শহরের দোকান বাড়ি জরিপ করেছেন। জমির পরিমাণ এবং সেই জমিতে নির্মাণ কাজ অর্থাৎ আবাস ঘরের মাপ দেখে দুটি মিলিয়ে কর ধার্য করা হয়েছে। তবে সেই পদ্ধতির যাথার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। মালবাজারের তথা ডুয়ার্সের অন্যতম ব্যবসায়ী সংগঠন মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর সহ সভাপতি সোমনাথ বসুর কথায়, “এই বর্ধিত পুরকর দেখে আমরা অবাক। কী পদ্ধতিতে এই কর নির্ণয় হয়েছে তাও বুঝছি না।”
পুরকর নিয়ে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। মালবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিদায়ী পুরসভার বোর্ডের সিপিএমের বিরোধী দলনেতা সুপ্রতীম সরকারের বলেন, “আমি প্রথম থেকেই এত কর বাড়ানোর বিপক্ষেই সওয়াল করে এসেছি। এই করের বোঝা টানতে গিয়ে অনেকেই অসমর্থ হবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এটা ফের বিবেচনা করা উচিত।” বিজেপির মালবাজার শহর কমিটির সম্পাদক মানিক বৈদ্য এই বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে হারে কর বাড়ানো হয়েছে তা মানা যায় না। আমরা এর বিরোধিতা করব।”
মালবাজারের বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সাহা বলেন, “বর্ধিত করের নোটিশ খারিজ করে যাতে পুনরায় জরিপ করে বিষয়টি দেখা হয় সেই আবেদন করা হবে।” তৃণমূল কংগ্রেসের টাউন সভাপতি মানসকান্তি সরকার অবশ্য পুরো বিষয়টি দ্রুত মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, আলোচনার অবকাশ রয়েছে বলেই বিষয়টি মিটে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy