বাড়ি লাগোয়া বিঘাখানেক জমিতে শাকসব্জি বা মরশুমি ফসল চাষ করেই আসগর আলি সংসার চালাতেন বলে জানতেন তার পড়শিরা। বেশ কয়েকদিন ধরে সেই বাড়িতে প্রায় প্রতি রাতে মোটরবাইক-সহ অপরিচিত লোকদের আনাগোনা দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর। শুক্রবার গভীর রাতে হেমতাবাধ ও কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আসগর আলির এই বাড়ি থেকে ২৫টি মোটরবাইক উদ্ধার করেছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, চোরাই মোটরবাইক কেনা-বেচার কাজ করতেন আসগর। আদালতে তোলা হলে ধৃত আসগর আলিকে ছ’ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বলতে বাগান ঘেরা একটি পাকা এবং তিনটে দরমা বেড়ার ঘর। উপরে টিনের চাল। লাগোয়া একটি গোয়াল ঘর। শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ আসগরের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুধুন্ডার বাসিন্দা ৪৫ বছরের আসগরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া মোটরবাইকের মূল্য অন্তত ১২ লক্ষ টাকা। উত্তর দিনাজপুর ছাড়াও, মালদহ, বিহার এবং লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন মোটরবাইক চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িতরা আসগর আলির কাছে চোরাই বাইক বিক্রি করত। কয়েকদিন নিজের বাড়িতে রাখার পরে নম্বর প্লেট বদলে সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া হতো বলে পুলিশের অনুমান। এক-একটি মোটরবাইক ২৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিহারে বিক্রি করা হতো বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, ধৃতের সঙ্গে আরও কেউ এই চোরাই মোটরবাইক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। কারা বাইক চুরি করে বিক্রি করত, তা জানতে ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে। বাইকের প্রকৃত মালিকদেরও খোঁজ চলছে। পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ধৃতের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হয়েছে কল রেকর্ড। এ দিন উদ্ধার হওয়া সব মোটরবাইকের নম্বর প্লেটেই উত্তর দিনাজপুরের নম্বর দেখা গিয়েছে। সে কারণেই পুলিশ মনে করছে, জেলা থেকে সহজেই অন্য জেলায় বা ভিনরাজ্যে পৌঁছে দিতেই নম্বর প্লেট বদলে দেওয়া হতো।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেলার ন’টি থানা এলাকায় বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ জমা পড়ে। তারমধ্যে রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ, চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর এলাকাতেই চুরির ঘটনা বেশি। হেমতাবাদ থানার ওসি মন্টু বর্মনের দাবি, চাষবাসের আড়ালে আসগর দীর্ঘদিন ধরে চোরাই মোটরবাইকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। অত্যন্ত সুকৌশলে আসগর কারবার চালানোয় এতদিন তা নজরে পড়েনি। সম্প্রতি ঘনঘন কয়েকটি মোটরবাইক বাড়িতে ঢুকতে দেখে পড়শিদের সন্দেহ হয়।
এ দিন রায়গঞ্জ জেলা আদালতে দাঁড়িয়ে আসগর অবশ্য দাবি করেছেন, চোরাই মোটরবাইক কেনাবেচার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বৈধভাবেই বাসিন্দারা তাঁর কাছে বাইক বিক্রি করতেন। কিছু লাভে পরে সে সেগুলি বিক্রি করত বলেও দাবি আসগরের। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের কাছে বাইক কেনা বা বিক্রির কোনও নথি নেই। মালিকানা সংক্রান্ত নথিও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy