অবরুদ্ধ জাতীয় সড়কে গাড়ির সারি। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
যানজটে অন্তত সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরূদ্ধ হয়ে থাকল শিলিগুড়ি লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। মঙ্গলবার দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত মাটিগাড়া থেকে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত সড়কে সার দিয়ে বাস, ছোট গাড়ি থেকে পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
যানজটের কারণে তীব্র দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীদের। যানজটের জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় স্কুলবাসগুলিকেও।
মাটিগাড়া এলাকার বিভিন্ন স্কুলের বাসগুলি এ দিন ন্যূনতম দেড় থেকে দু’ঘণ্টা পরে শিলিগুড়ি শহরে পৌঁছেছে। দীর্ঘক্ষণ বাসের ভিতরে বসে থাকতে হয় পড়ুয়াদের। স্কুলছুটির পরে বাসেই এক দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে বাধ্য হওয়ায় অনেকেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। যানযটে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট চললেও অতিরিক্ত ট্র্যাফিক পুলিশ নামিয়ে জট ছাড়ানোর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। তার জেরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘এ দিন মাটিগাড়ায় সাপ্তাহিক হাটের দিন ছিল। সেই সঙ্গে সেনা বাহিনীর কয়েকটি কনভয়ও জাতীয় সড়ক দিয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই যানজট হয়েছিল বলে শুনেছি। বিকেলের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যানজট ছাড়াতে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’
যদিও, পুলিশের যুক্তি মানতে চাননি ভুক্তভোগীরা। তাঁদের দাবি, মাটিগাড়ায় হাট প্রতি সপ্তাহেই বসে। হাটের কারণে যানজট হলে প্রতি সপ্তাহেই এমন সমস্যা হতো বলে দাবি মাটিগাড়ার ব্যবসায়ীদেরও। জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রায় দিন-ই একাধিক ভিভিআইপি কনভয় যাতায়াত করে। সে ক্ষেত্রেও প্রতিদিনই যানজটের আশঙ্কা থাকত। নাকাল বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাতেই এ দিন যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
এ দিন দুপুর একটা নাগাদ মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড় থেকে যানজট শুরু হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই সেই জট একদিকে দার্জিলিং মোড় অন্যদিকে শিবমন্দির পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরায়ণ থেকে দার্জিলিং মোড় পৌঁছতেই প্রায় এক ঘণ্টা লেগে গিয়েছে বলে অভিযোগ। দুপুর তিনটে থেকে জাতীয় সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় মাটিগাড়ি, সুকনার বিভিন্ন স্কুল থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে বাস রওনা হয়। যানজটে আটকে পড়ে সেই বাসগুলিও। দীর্ঘক্ষণ পড়ুয়ারা না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। তাঁদের একাংশ যানজটের বিষয়ে পুলিশকে জানালেও কোনও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ। সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরাও।
ব্যবসায়ীদের তরফে অবশ্য পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণ পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা-র অভিযোগ, শুধু একদিন নয় দার্জিলিং মোড়ে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে পুলিশ-প্রশাসনকে জানালেও ফল মেলেনি বলে দাবি। বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘এমন যানজট একদিন কেন, নিয়মিত হলেও, অবাক হওয়ার কিছু নেই। দিনের যে কোনও সময়েই দার্জিলিং মোড় হয়ে কোথাও যাওয়ার হলে যানজটের আশঙ্কায় থাকি। অন্তত এক ঘণ্টা হাতে সময় নিয়ে বের হলে তবে সঠিক সময়ে যাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তা অনেক সময়েই অসম্ভব।’’ অন্যদিকে, মাটিগাড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অর্ধেন্দু বিশ্বাসের দাবি, ‘‘হাটের কারণে যানজট এটা মানা যায় না। প্রতি সপ্তাহেই হাট বসে। তখন তো এই রাস্তায় কোনও সমস্যা হয়নি। গাফিলতি ঢাকতেই হাট বসার যুক্তি দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy