Advertisement
E-Paper

রায়গঞ্জে দেওরের বিরুদ্ধে আবেগই হাতিয়ার বৌদির

তাঁর ছোট দেওর। রায়গঞ্জের পৈতৃক বাড়ির নীচের তলার বাসিন্দাও। বৌদি হয়ে এ হেন ঘনিষ্ঠ পারিবারিক প্রতিপক্ষকে আর যাই হোক ধারাল আক্রমণ তো করা যায় না! রায়গঞ্জের শাসক দলের প্রার্থী সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিকে তাই আবেগ দিয়েই ঘায়েল করতে চাইছেন দীপা দাশমুন্সি। শনিবার স্থানীয় বিধান মঞ্চে দলীয় কর্মিসভায় কংগ্রেস প্রার্থী দীপাদেবী তাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মাস কয়েক আগে দলীয় কাজে কলকাতায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সত্যবাবু।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৩

তাঁর ছোট দেওর। রায়গঞ্জের পৈতৃক বাড়ির নীচের তলার বাসিন্দাও।

বৌদি হয়ে এ হেন ঘনিষ্ঠ পারিবারিক প্রতিপক্ষকে আর যাই হোক ধারাল আক্রমণ তো করা যায় না! রায়গঞ্জের শাসক দলের প্রার্থী সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিকে তাই আবেগ দিয়েই ঘায়েল করতে চাইছেন দীপা দাশমুন্সি।

শনিবার স্থানীয় বিধান মঞ্চে দলীয় কর্মিসভায় কংগ্রেস প্রার্থী দীপাদেবী তাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মাস কয়েক আগে দলীয় কাজে কলকাতায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সত্যবাবু।

দীপাদেবীর কথায়, “দলীয় কর্মীরা তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করেই দায় সেরেছিলেন। কিন্তু ও ভাবে কী ফেলে রাখা যায়? আমিই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করি। দিন কয়েক পরেই অস্ত্রোপচার হয়েছিল সত্যর। মনে রাখবেন পারিবারিক সম্পর্কের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক না মেলানোটাই দাশমুন্সি পরিবারের ঐতিহ্য।”

স্বামী প্রিয়রঞ্জনের অসুস্থতার প্রসঙ্গ তুলে কিঞ্চিৎ আবেগতাড়িতও হয়ে পড়ে দীপা ধরা গলায় গেয়ে ওঠেন, “আয় খুদা রেত কে সেহ্রা কো সমুন্দর কর দে, ইয়া ছলকতি হুয়ি আঁখো কো ভি পত্থর কর দে।”

মঞ্চে দীপাদেবীর পাশেই ছিলেন সদ্য পুরনো দলে ফিরে আসা কলকাতা (উত্তর) কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সোমেন মিত্র। তিনি অবশ্য পারিবারিক আবেগের ধার দিয়ে হাঁটেননি। বরং প্রশ্ন তুলেছেন, রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থীর দাদা প্রিয়রঞ্জনের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ নিয়েই। সোমেন বলেন, “সত্তরের দশকের আগে থেকে প্রিয়দার নেতৃত্বে রাজনীতি করেছি। কোনও দিন তো প্রিয়দার কোনও আপদ-বিপদে ভাই সত্যকে তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখিনি।”

কখনও আবেগ, কখনও বা দাদার প্রতি তাঁয় ‘দায়বদ্ধতা’রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সত্যরঞ্জনবাবুকে এ দিন এ ভাবেই আক্রমণ শানালেন দীপা-সোমেন।

বৌদি দীপা এবং সোমেনের কথার অবশ্য জবাব দিয়েছেন সত্যরঞ্জন। তিনি বলেন, “পারিবারিক সম্পর্ক আছে বলেই আমার অসুস্থতার সময়ে বৌদি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে রাজনীতির মঞ্চ থেকে কে কী বলছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আর জেনে রাখুন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই দাদার অসমাপ্ত কাজ শেষ করব। বৌদি যা পাঁচ বছরেও পারেননি।”

তবে শাসক দলের প্রার্থীকে পারিবারিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে বিঁধলেও কংগ্রেসের দুই হেভিওয়েট নেতা-নেত্রী তাঁর দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণই শানালেন।

এ দিনের কর্মিসভায় সোমেনের প্রশ্ন, শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির প্রশ্নে রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না কেন?

প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা জেগে ঘুমোন। রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্বপ্ন পূরণ হবে, রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তি ও সম্মান বাড়বে। তাই হাসপাতাল তৈরির জন্য রায়গঞ্জের পানিশালা এলাকার চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি থাকলেও রাজ্য সরকার ষড়যন্ত্র করে জমি অধিগ্রহণ করল না। অথচ এই সরকারই উত্তরকন্যার জন্য জমির বন্দোবস্ত করে ফেলল।”

এইমস প্রশ্নে সরব ছিলেন দীপাও। দিন কয়েক আগে ইটাহারে দলীয় কর্মিসভায় তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, হাসপাতাল তৈরির জন্য তিনি চাষিদের কাছ থেকে জোর করে জমি নেবে না সরকার। বদলে রায়গঞ্জে একটি মেডিক্যাল কলেজ, মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়া হবে। সে প্রসঙ্গ টেনে এ দিন দীপাদেবীর প্রশ্ন, “রাজ্য সরকার চাষের জমি না নিলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত হাসপাতাল দু’টি কি আকাশে হবে?”

শাসক দলের প্রার্থীর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তেলার পাশাপাশি বামফ্রন্টের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে পরিযায়ী পাখির সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েননি সোমেন। তিনি বলেন, “রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসে প্রতি বছর পরিযায়ী পাখির ভিড় জমে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওরা উড়ে যায়। সেলিম তেমনই ভোটের পরিযায়ী পাখি। ভোটে হেরে যাওয়ার পরে তাঁকে আর দেখা যাবে না।

সোমেনবাবুর অভিযোগের অবশ্য জবাব দিয়েছেন সেলিম। তাঁর কটাক্ষ, “সোমেনবাবু তো নিজেই গতবার তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারে। এ বার আবার কংগ্রেসের হয়ে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে। কে কাকে পরিযায়ী পাখি বলছেন!”

gour acharjee raiganj dipa dasmunshi lok sabha election 2014
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy