Advertisement
E-Paper

ছোট্ট মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন মা-বাবাই, তার পর ‘নাটক’! বাঁকুড়াকাণ্ডে দম্পতির কথা শুনে হতভম্ব তদন্তকারীরা

প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে ধরে এলাকায় চিরুনি তল্লাশির পর বাবা প্রশান্ত বাউরির দেখানো ঝোপ থেকেই শনিবার কয়েকটি হাড়গোড় উদ্ধার করেছিল পুলি‌শ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৩:৫৫
ছবি: এআই।

ছবি: এআই।

মা-বাবার পাশ থেকে উধাও হয়নি দেড় বছরের মেয়ে। বাবাই তাকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছিলেন। তাতে সঙ্গ দিয়েছিলেন মা-ও। পরে শিশুর দেহ ফেলে আসা হয়েছিল বাড়ির অদূরে পুকুরপাড়ের ঝোপে। বাঁকুড়া সদরের বগা গ্রামে শিশু খুনের ওই ঘটনায় ধৃত মা-বাবাকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।

প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে ধরে এলাকায় চিরুনি তল্লাশির পর বাবা প্রশান্ত বাউরির দেখানো ঝোপ থেকেই শনিবার কয়েকটি হাড়গোড় উদ্ধার করেছিল পুলি‌শ। কিন্তু সেগুলি যে শিশুটিরই হাড়গোড়, ফরেন্সিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। কিন্তু তদন্তকারীদের একাংশের দৃঢ় বিশ্বাস যে, হাড়গোড়গুলি বছর দেড়েকের ওই শিশুটিরই। কারণ, ঘটনার রাতে শিশুটির পরনে থাকা প্যান্টও উদ্ধার হয়েছে সেখান থেকে।

কিন্তু মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে দেহের হাড়গোড় কী ভাবে বেরিয়ে এল, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, ওই এলাকায় প্রচুর শিয়াল রয়েছে। হয়তো শিয়ালেই শিশুটির দেহ খুবলে খেয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটির দেহ উদ্ধার হওয়ার পরেই বাবা প্রশান্ত এবং মা মুন্নি বাউরিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধৃতেরা জেরায় সন্তান খুনের কথা কবুল করেছেন। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মুন্নি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই দাম্পত্যকলহ চলছিল দম্পতির মধ্যে। তার জেরেই এই খুন।

তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশান্তের দাবি, মুন্নির সঙ্গে তাঁর গত চার বছর ধরে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই। তার মধ্যে আড়াই বছর আগে কী ভাবে মুন্নির গর্ভে সন্তান এল, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল প্রশান্তের মনে। স্ত্রীর গর্ভপাত করানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বুধবার রাতে আকণ্ঠ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন প্রশান্ত। মুন্নি তখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়েই ছোট মেয়েকে প্রশান্ত খুন করেছেন বলে জেরায় জানতে পেরেছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মেয়েকে খুন করার সময় মুন্নি জেগেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কেন বাধা দেননি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে গিয়েছে। মুন্নি কেন ‘সঙ্গ’ দিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, প্রশান্ত হয়তো মুন্নিকে হুমকি দিয়েছিলেন। যদিও এই সব দাবির আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি পুলিশের তরফে। এ বিষয়ে সরকারি ভাবেও পুলিশ কিছু জানায়নি এখনও।

ধৃতদের রবিবার বাঁকুড়া জেলা আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে প্রবেশের সময় মুন্নি অবশ্য সন্তান খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা। আমি মা হিসাবে কখনও নিজের সন্তানকে খুন করতে পারি?’’ প্রশান্তও প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা।’’ বিচারক প্রশান্তকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর মুন্নিকে ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কথা বলা হচ্ছে পাড়াপড়শিদের সঙ্গেও। কারণ, গত বুধবার রাতে কেউ বা কারা মেয়েকে চুরি করে নিয়েছে বলে যে ভাবে দম্পতি ‘নাটক’ ফেঁদেছিলেন, তাতে তাঁদের সব কথা পুরোপুরি মেনে নিতে পারছেন না তদন্তকারীদের একাংশ। ধৃত দম্পতি জেরায় যা যা দাবি করেছেন, সবই যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ দর্জি বলেন, ‘‘ধৃত দম্পতির বিরুদ্ধে খুন ও প্রমাণ লোপাটের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। দম্পতিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ব্যাপারে আরও বিশদে জানার চেষ্টা হবে। প্রয়োজনে ঘটনার পুনর্নির্মাণও হবে।’’

bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy