Advertisement
E-Paper

বাঁধা দরের পেঁয়াজ কিনতে হাতাহাতি

নিয়ম বাঁচাতে তাই কেউ কিনছেন একটা শশা, কেউ বা ২০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কা, কেউ আবার একটি পাতিলেবুও!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৬
শূন্য: মানিকতলা বাজারে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে রাজ্য সরকার। তবে রবিবার বিক্রি শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই খালি হয়ে যায় ভাঁড়ার। পেঁয়াজ না-পেয়ে হতাশ ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

শূন্য: মানিকতলা বাজারে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে রাজ্য সরকার। তবে রবিবার বিক্রি শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই খালি হয়ে যায় ভাঁড়ার। পেঁয়াজ না-পেয়ে হতাশ ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

‘‘ও দাদা, আরে ও দাদা, শুনছেন! বলি ও ভাই! এই যে, এটা কী হল?’’— অগ্নিশর্মা হয়ে ফুঁসছেন যিনি, বয়স তাঁর সত্তর ছুঁয়েছে। তাঁর লক্ষ্য এক যুবক। যিনি পেঁয়াজ কেনার লাইনে তাঁর থেকে তিন জনের আগে আছেন।

বৃদ্ধ সমানে বলে চলেছেন, ‘‘৩৫ গ্রাম ওজনের একটা টোম্যাটো কিনে ৫০০ পেঁয়াজ নিয়ে নিল! আর আমরা দেড় ঘণ্টা ধরে লাইন দিয়ে এত আনাজ কিনে শেষে পেঁয়াজ পাব কি না ঠিক নেই। এটা কোনও নিয়ম হল!’’ ঘটনাস্থল রাজ্য সরকারের আনাজ বিক্রির দোকান ‘সুফল বাংলা’। স্থান, কেষ্টপুর সিদ্ধার্থনগর। এখানে সরকারি দামে পেঁয়াজ কেনার নিয়ম, আনাজ কিনলে তবেই ক্রেতা-পিছু ৫০০ গ্রাম পেঁয়াজ মিলবে।

পেঁয়াজের দাম যে-দিন থেকে ৭০ ছাড়িয়েছে, সুফল বাংলার স্টলে তখন থেকে দাম চলছে ৫৯ টাকা কেজি। কেষ্টপুরে সুফল বাংলার স্টলটিতে আনাজ, মুদিখানার জিনিস মিললেও ভিড় খুব একটা হয় না। পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি করার পরে ভিড় বাড়তে শুরু করে ওই দোকানে। তবে ১৫০ ছোঁয়ার পরে, বিশেষ করে শুক্রবার থেকে সুফল বাংলার স্টল যেন একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো মণ্ডপ!

সুফল বাংলা স্টলের এক কর্মী জানালেন, স্টলে তাজা আনাজ থাকে। কিন্তু সকলেই পেঁয়াজ কিনতে চাইছে বলে নিয়ম করা হয়েছে, কোনও আনাজ কিনলে তবেই পেঁয়াজ মিলবে। রবিবার সকালে দেখা গেল, ক্রেতাদের লাইন দোকান ছাড়িয়ে বাইরের রাস্তায় লম্বা হয়ে বহু দূর চলে গিয়েছে। আনাজ কিনে এনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আনাজের বিল হলে তবেই মিলছে বরাদ্দ পেঁয়াজ।

নিয়ম বাঁচাতে তাই কেউ কিনছেন একটা শশা, কেউ বা ২০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কা, কেউ আবার একটি পাতিলেবুও! বারোয়ারিতলা থেকে এসেছেন সুজন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে একটু ভিড় হয় এখানে। তবে এত ভিড় কোনও দিন দেখিনি। তিন দিন ধরে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে এখানে।’’

রবিবার গোলমালটা শুরু হল একটা টোম্যাটো কিনে পেঁয়াজ নেওয়ার পর থেকেই। লাইনের অনেকটা পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজা ভক্ত। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘‘দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। লাইন এগোচ্ছে না কেন? এ দিকে আর আধবস্তা পেঁয়াজ পড়ে রয়েছে।’’ তাঁর সামনের জন বললেন, ‘‘সকলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছে। এক-একটা কাঁচকলা কিনে ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ নিয়ে যাচ্ছে।’’

এর পরেই শুরু হল বিক্ষোভ। কেন এমন হবে? কাউন্টারে ছিলেন এক কর্মী। তাঁর অসহায় প্রশ্ন, এক বাড়ির লোক কিনা, সেটা তিনি বুঝবেন কী করে? তাঁর পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়। পিছন থেকে এক জন বললেন, ‘‘তা হলে আধার কার্ড দেখে দিন। বাবার নাম এক হলে পেঁয়াজ দেওয়া হবে না।’’ ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জন বললেন, ‘‘দু’ভাই যদি আলাদা থাকে, তা হলে?’’ লাইনে তখনও শ’‌দেড়েক ক্রেতা। পিছনের লোকেরা সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করলে সামনের ক্রেতারা তাঁদের সরাতে যান। বেধে যায় হাতাহাতি।

তখন বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা। লাইন ভেঙে গেল। বেজার মুখে ব্যাগ হাতে হাঁটা দিলেন অনেকেই।

Sufal Bangla Store Onion Vegetable
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy