আহত হপনা টুডু। নিজস্ব চিত্র
গাফিলতির অভিযোগে সুর চড়ালেন এক পক্ষ। অন্য পক্ষের দাবি, অন্তর্ঘাত হয়ে থাকতে পারে। বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনা নিয়ে রবিবার দিনভর চলল রাজনৈতিক তরজা।
বর্ধমান স্টেশনে শনিবার রাতের ওই দুর্ঘটনার জন্য তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম— সকলেই এক সুরে রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে সরব হয়েছে। ঐতিহ্যশালী ভবন রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের নজর নেই বলে তাদের অভিযোগ। বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার আবার পাল্টা দাবি, এর পিছনে অন্তর্ঘাতও থাকতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সুর তাঁর থেকে ভিন্ন। তিনি মেনে নিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনার দায়িত্ব রেলকে নিতে হবে। একই অভিমত প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়েরও।
দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা আগেই রেলকে জানিয়েছিলাম, ভবনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রেল তাতে গুরুত্ব দিলে এই বিপদ ঘটত না।’’ উদ্ধারকাজ দেখতে রাতভর স্টেশনে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেলের গাফিলতির জন্যই ভবন ধসে পড়ল। বাইরে চাকচিক্য আর ভিতরটা ফাঁপা। কেন্দ্রের নীতির জন্যই এমন দশা।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, শীতের রাতে উদ্ধারকাজের সময়ে তাঁরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও রেলের কর্তারা ভিতরে বসেছিলেন। তাই ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১২ ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছে।
রেলের ঐতিহ্যবাহী ভবন রক্ষায় কেন্দ্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘রেলবোর্ডের হস্তক্ষেপে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। আমরা মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এই সরকারের আমলে নতুন কিছু গড়া হচ্ছে না। যা আছে, তা ভেঙে পড়ছে। রেল বারে বারে ভাড়া বাড়াতে যত ব্যস্ত, রেলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিয়ে ততটাই আপস করে চলেছে।’’ সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘ওই ভবনের একাংশে এখনও ফাটল রয়েছে।’’
বিরোধীদের এ সব অভিযোগকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ বিজেপি সাংসদ অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহ্যশালী ভবনটি ভেঙে পড়ার পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, দেখতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, “ডিআরএম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটি গড়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে কী হয়েছে বলা যাবে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল অবশ্য বলেন, ‘‘রেলস্টেশনের একটা অংশ যখন ভেঙে পড়েছে, তখন রেলকে তো তার দায়িত্ব নিতেই হবে। অসুবিধের কী আছে? আমাদের দেশে অনেক পুরনো রেলস্টেশন আছে। অনেক বাড়ি-ঘর ছোট ছোট ইউনিট বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয়ই রেল খতিয়ে দেখবে।’’ ওই দুর্ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে বাবুল আরও বলেন, ‘‘আমার কেন্দ্রের পাশে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি সেখানে যাব। আর রেলমন্ত্রী দায়িত্বশীল। তিনি যা বলার বলেছেন। আমার নতুন কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy