E-Paper

দাগি দলে ‘রমরমা’ তৃণমূলের

এসএসসি শনিবার দাগি শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতানেত্রী, কারও কারও আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে। একই সঙ্গে একদা তৃণমূল এবং বর্তমানে বিজেপি বা বরাবরই বিজেপিতে থাকা নেতা বা তাঁদের পরিজনের নামও সামনে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৯

—প্রতীকী চিত্র।

তৃণমূল তো আছেই, দাগি তালিকায় সন্ধান পাওয়া গেল বিজেপিরও!

এসএসসি শনিবার দাগি শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতানেত্রী, কারও কারও আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে। একই সঙ্গে একদা তৃণমূল এবং বর্তমানে বিজেপি বা বরাবরই বিজেপিতে থাকা নেতা বা তাঁদের পরিজনের নামও সামনে এসেছে। ফলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে বিজেপি এত দিন শাসকদলকে নিশানা করছিল, তারাও এখন প্রশ্নের মুখে। যদিও সংখ্যার বিচারে তৃণমূলের দিকে পাল্লা অনেক বেশি ভারী।

এই দুর্নীতির একেবারে গোড়ায় চাকরি যায় প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। অঙ্কিতা এখন তৃণমূলের জেলা সম্পাদিকা। দাগি তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। পরেশ ও অঙ্কিতা— দু’জনেই বিষয়টি বিচারাধীন বলে মন্তব্য এড়ান। যে ববিতা সরকারের করা মামলায় অঙ্কিতার চাকরি গিয়েছিল, তিনিও পরে চাকরি হারান। এ দিন ববিতা অবশ্য বলেন, ‘‘আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অন্য কিছু আর ভাবতেচাই না।’’

তালিকায় নাম রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের এক দাপুটে তৃণমূল বিধায়কের মেয়ের। সেখানকার প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি কবিতা বর্মণের নামও রয়েছে। কবিতা ও তাঁর স্বামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। কবিতার দাবি, ‘‘মেধার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছি। আইনি পথে লড়ার চিন্তাভাবনা করছি।”

মেখলিগঞ্জের এক প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতার নাম আছে দাগি তালিকায়, যিনি এখন বিজেপিতে। তাঁর দাবি, ‘‘ন্যায্য ভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি।” আবার মালদহের কালিয়াচকের এক জেলা পরিষদ সদস্যের স্বামী, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের এক পুরপ্রতিনিধি, তপনের এক তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির স্ত্রী, ব্লক তৃণমূল সদস্যের স্ত্রীর নামও রয়েছে তালিকায়।

নাম আছে কলকাতার কাছে রাজারহাট পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর বোনের। নিউ ব্যারাকপুরের উপ-পুরপ্রধান স্বপ্না বিশ্বাস একটি স্কুলের সভাপতি। তাঁর মেয়ে সেই স্কুলেই পড়ান। তাঁর নাম তালিকায় থাকায় স্বপ্নার দাবি, দুর্নীতি নয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি হয় মেয়ের।

পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রাক্তন তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ, হুগলি জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যার নাম আছে তালিকায়। ঠাঁই পেয়েছে বারাসত ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ইছা হক সরদারের ছেলে মহম্মদ নাজিবুল্লাহর নামও। নাজিবুল্লাহর প্রশ্ন, ‘‘আদালতে বার বার এসএসসি বলেছে, ওএমআর শিট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা হলে তারা অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করল কী ভাবে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। আদালতে যাচ্ছি।’’

দাগি তালিকায় দলের এত নেতা বা তাঁদের নিকটজনেরা ঠাঁই পাওয়ায় তৃণমূলের অস্বস্তি বেড়েছে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দলের তরফে এ নিয়ে কিছু বলছি না। তদন্ত তদন্তের মতো চলবে। অনিয়ম তো কিছু হয়েছেই। কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছেন। কাউকে আড়াল করছি না।’’

একই সঙ্গে কুণালের দাবি, ‘‘এ নিয়ে সিপিএম-বিজেপির কথা বলা সাজে না। সিপিএম আমলে দলের সর্বক্ষণের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি চাকরি হয়েছে। আর বিজেপি তো এই সব অভিযোগে অভিযুক্ত! তাই ওদের নৈতিক ভাবে এ নিয়ে কিছু বলার অধিকার নেই।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি বলতে পারব না। আমি তালিকা দেখিনি।’’

তালিকায় নাম রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার গোজিনা পঞ্চায়েতের এক পদাধিকারী বিজেপি নেতার, পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হাই স্কুলের শিক্ষক তিনি। উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির এক পদাধিকারীর ভাইয়ের নামও আছে তালিকায়। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার এক নেতার স্ত্রীর নামও রয়েছে তালিকায়। ওই নেতার দাবি, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে চক্রান্ত করে স্ত্রীর নাম দেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওঁদের কথা হয়েছে। ওঁরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন এবং প্রকৃত ওএমআর শিট বার করে সত্য সামনে আনবেন।’’

রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের কাছে এখনও পর্যন্ত দলের কারও ওই তালিকায় নাম থাকা নিয়ে তেমন কোনও তথ্য আসেনি। তাঁর সংযোজন, ‘‘যদি সত্যিই এমন কারও নাম থেকে থাকে, তা হলে বিচার হবে। অন্যায় তো অন্যায়ই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengal SSC Recruitment Case TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy