জনস্বার্থ মামলার অপব্যবহার ঠেকানো দরকার। জনস্বার্থ মামলা গরিব এবং বঞ্চিতদের সাহায্য করার জন্য তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক স্বার্থে এটি ব্যবহার হলে আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হবে। জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে মতুয়াদের করা জনস্বার্থ মামলায় মন্তব্য কলকাতা হাই কোর্টের। তাদের ওই মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, রাজনৈতিক স্বার্থে জনস্বার্থ মামলাকে ব্যবহার করা যাবে না। রায় ঘোষণা করার সময় পর্যবেক্ষণে তাঁরা বলেন, মামলাকারীদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ফলে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মামলাটি খারিজ করা হল। ওই বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন মেনেই পদক্ষেপ হবে।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, গত ১৫ বছর ধরে অনেককে বেআইনি ভাবে ভুয়ো তফসিলি জাতি এবং জনজাতির (এসসি-এসটি) শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। তাদের বক্তব্য, অন্য সম্প্রদায়কে ভুয়ো এসসি-এসটি শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। ওই সব ভুয়ো শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। বিষয়টি সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। জনস্বার্থ মামলা করার কারণ হিসাবে তাদের আইনজীবীর যুক্তি, আদালত জনস্বার্থে এই মামলা শুনতে পারে। কারণ এই বিষয়টিতে কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নয়। সাধারণ মানুষও সমাজের স্বার্থে মামলা করতে পারেন।
রাজনৈতিক দলের কেউ মামলা করলে সেটা খারিজের কারণ হতে পারে না বলেও আদালতে যুক্তি দেওয়া হয় আবেদনকারী পক্ষের তরফে। রাজ্য সরকারের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল, আইন মেনে জাল শংসাপত্র বাতিল করার আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। যদি শংসাপত্র জালিয়াতি বা ভুল তথ্য দিয়ে করা হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা বাতিল করতে পারবেন। মামলাকারীরা ইতিমধ্যে ওই বিষয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি পুরো বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছেন। অন্য দিকে, পীযূষ সাহা নামে এক শিক্ষকের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় যুক্তি দেন, নির্দিষ্ট আইনি পথে সমাধান হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা জনস্বার্থ মামলা কেন গ্রহণযোগ্য হবে? তা ছাড়া ওই সংগঠনটি কোনও এসসি-এসটি সংস্থা নয়। তাই তাদের এ ধরনের অভিযোগ আনার অধিকার নেই।
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, আগে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র বাতিলের জন্য নির্দিষ্ট কোনও আইনি ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখন তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫ সালের আইন রয়েছে। ইতিমধ্যে মতুয়া মহাসঙ্ঘ ওই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। ফলে সরকারি সংস্থা বা আধিকারিককে ওই অভিযোগ নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই রায় মহকুমাশাসক বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষের তদন্তে বাধা হবে না। তারা আইন অনুযায়ী ভুয়ো শংসাপত্র সংক্রান্ত অভিযোগগুলির বৈধতা খতিয়ে দেখবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন।