আক্রান্ত শালওয়ালা জাভেদ আহমেদ খান। নিজস্ব চিত্র
আলোআঁধারিতে মোবাইলে তোলা অস্পষ্ট ভিডিয়ো। কোলাপসিবল গেটের ওপারে সেঁধিয়ে যাওয়া যুবকের নাকমুখ থেকে রক্ত ধরছে। উগ্র ‘দেশভক্তি’র জিগির তোলা উন্মত্ত বাহিনী তাঁকে গালি দিতে দিতে বলছিল, ‘‘বল বন্দেমাতরম, বল ভারতমাতা কি জয়!’’
নদিয়ার তাহেরপুরে গত দশ বছর ধরে শাল বিক্রির সূত্রে যাতায়াত জম্মু-কাশ্মীরের বদগামের বাসিন্দা জাভেদ আহমেদ খানের। এলাকার বহু মানুষের সঙ্গে চেনাশোনা, বন্ধুত্ব। একটি দোকানঘর রয়েছে তাঁদের, আছে ভাড়াবাড়িও। কোনও দিন নিরাপত্তার অভাব বোধ করেননি। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ মারমুখী কিছু লোক ১৭ নম্বর রাস্তার ধারে তাঁদের ওই ভাড়াবাড়িতে হামলা চালায়। মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া সেই আক্রমণের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মঙ্গলবার। তার পরেও বুধবার জাভেদ কিন্তু আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘জানি মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিদ্বেষ ছড়াতে এ সব করছে। এতে ভয় পাব না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উপরে পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের।’’
মঙ্গলবার রাতে জাভেদের উপরে যখন হামলা হয়, তখন এলাকারই কিছু লোক পুলিশকে জানিয়েছিলেন। ঘণ্টাখেনক পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে জাভেদ আর তাঁর তুতো ভাই মেহরাজউদ্দিনকে। তাঁদের আপাতত একটি নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে এক জনকে, যদিও পুলিশ তার পরিচয় জানাতে চায়নি। বাকিদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার।
ভারতের অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে কতটা জানেন, পরখ করে নিন জ্ঞানভাণ্ডার
আরও পড়ুন: মানুষকে আশ্বস্ত করা যাচ্ছে না, গুজব রুখতে এ বার ক্লাবের মদত চাইল পুলিশ
গোপন আবাস থেকে মানুষের শুভবুদ্ধির উপরেই আস্থা রেখেছেন জাভেদ। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে তিনি বলেন, ‘‘এত দিন এখানে ব্যবসা করছি আমরা। এখানকার মানুষের এত ভালবাসা পেয়েছি। যারা এসেছিল তারা আমার পরিচিত নয়। ভয় পেয়ে চলে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।’’
এই আস্থাই দেশপ্রেমিকের ভেকধারীদের রুখে দেওয়ার অন্যতম অস্ত্র বলে মনে করছেন শান্তিকামী নাগরিকেরা। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকে দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরিদের উপরে হামলা চালাচ্ছে কিছু মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিদ্বেষ রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এ দিন মমতার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মীরি যুবকের উপর হামলার ঘটনায় দিদির সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’’
আরও পড়ুন: খবরটা কি ভুয়ো? যাচাইয়ের আবেদন পুলিশকর্তাদের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy