Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় মহিষাসুর স্মরণ

চারদিকে যখন অসুরদলনী দুর্গার পুজো চলছিল, সেই সময় অন্য পুজো হল কাশীপুর থানার ভালাগোড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বৃহস্পতিবার পূজিত হলেন হুদুড় দুর্গা। উদ্যোক্তাদের কথায়, মহিষাসুরের স্মরণ দিবস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

চারদিকে যখন অসুরদলনী দুর্গার পুজো চলছিল, সেই সময় অন্য পুজো হল কাশীপুর থানার ভালাগোড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বৃহস্পতিবার পূজিত হলেন হুদুড় দুর্গা। উদ্যোক্তাদের কথায়, মহিষাসুরের স্মরণ দিবস। মহানবমীর দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন বলে তাঁদের আদিপুরুষ ঘোরাসুর তথা মহিষাসুরকে স্মরণ করলেন আদিবাসীরা। উদ্যোক্তা শিকার দিশম খেড়ওয়াল বীর লাকচার কমিটি।

আদিবাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আর্য রমণীর দ্বারা অন্যায় ভাবে নিধন করা হয়েছিল তাঁদের আদিপুরুষ হুদুড় দুর্গাকে (মহিষাসুর)। শিকার দিশম খেড়ওয়াল বীর লাকচার কমিটির তরফে অজিতপ্রসাদ হেমব্রমের কথায়, ‘‘দুর্গার হাতে নিহত হন আমাদের আদিপুরুষ হুদুড় দুর্গা। যিনি ঘোরাসুর বা মহিষাসুর নামেও পরিচিত। আমরা মনে করি নীতিহীন যুদ্ধে তাঁকে মারা হয়েছিল। তাতে ভারতের ভূমিপুত্র খেড়ওয়ালরা দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। ঘোরাসুরকে এই যুদ্ধে পরাজিত করার পরে আর্যাবর্ত নামে আর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন আর্যপক্ষ বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছিল। সেই সময় সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, কুড়মি, মাহালি, কোড়া প্রভৃতি খেড়ওয়াল গোষ্ঠীর আদিবাসীরা বশ্যতা স্বীকার না করে নিজেদের নিজেদের মান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নারীর ছদ্মবেশে দাঁশাই নাচ, কাঠি নাচের মাধ্যমে অন্তরের দুঃখ নিয়ে আনন্দের অভিনয় করতে করতে সিন্ধু পাড় ছেড়ে আসম, কাছাড়, ওড়িশা, বঙ্গদেশ ও দক্ষিণ ভারতের বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল।’’ অজিতবাবুর দাবি, অনার্যরা কখনও মহিলাদের আক্রমণ করে না। সেই বিশ্বাস থেকেই পুরুষেরাও নারীর ছদ্মবেশে এ ভাবে নারী বস্ত্র পরিধান করে সেরেঞ বা ভুয়াং হাতে দলবদ্ধ ভাবে হায়রে হায়রে শব্দ করতে করতে এই উৎসবের সময়ে অর্থাত দুর্গা পুজোর সময়ে দাঁশাই নাচেন। এই নাচ তাঁদের সম্প্রদায়ের কাছে দুঃখ-দাঁশাই নামেও পরিচিত। সেই পরাজয়ের ব্যাথা বুকে নিয়ে আজও তাঁদের সমাজের লোকজন দাঁশাই নাচেন। তাঁর কথায়, ‘‘হুদুড় দুর্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ও পূজ্য। আমরা মনে করি, তিনি ছিলেন বলেই তাঁরই প্রবর্তিত সমাজনীতির গুণে ভারতের আদিবাসী দলিত জনগোষ্ঠীর সমাজ হাজারো বঞ্চনার মধ্যে শান্তিতে বসবাস করছে।’’

মহানবমীর দিনে দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন বলে সেই দিনটিকেই তাঁরা আদিপুরুষকে স্মরণ করার দিন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। স্মৃতিচারণা, কাঠি নাচ, করম নাচ, কবিগান, ছৌ নাচ-সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালাগোড়া স্কুল মাঠে দিনভর এই শ্রদ্ধার্পণ অনুষ্ঠান হয়। যোগ দিয়েছিলেন এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার আদিবাসীরাও।

শত্রুঘ্ন মুর্মু, বীরবল মুর্মু, সুবোধ মুর্মু প্রমুখের কথায়, ‘‘আমাদের আদিপুরুষকে এই দিনে নিধন করা হয়েছিল বলে এই দিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি।’’ ঝাড়গ্রাম থেকে আসা কেশব সোরেন বলেন, ‘‘এই দিনটির তাৎপর্য মানুষের জানা প্রয়োজন। পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘আদিপুরুষ ঘোরাসুরকে অন্যায় ভাবে হারানো হয়েছিল। কারণ তিনি কোনও নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন না। কেউ তাঁকে হারাতে না পেরে একজন নারীকে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছিল। নীতিহীন যুদ্ধের এই পরাজয় আমরা মানতে পারিনি। তাই এই স্মরণ অনুষ্ঠান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE