ঝাড়খণ্ড থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ‘গোপন ডেরা’য় লুকিয়ে রেখেছিল অপহরণকারীরা। দুই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। তবে পুলিশের আচমকা হানায় ব্যর্থ হল তাদের ‘মিশন।’ শুধুমাত্র অপহৃত দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করাই নয়, অযোধ্যা পাহাড়ের গোপন ঘাঁটি থেকে চার অপহরণকারীকে পাকড়াও করল পুরুলিয়া পুলিশ। ধৃতেরা সকলেই আন্তঃরাজ্য অপহরণকারী বলে দাবি পুলিশের।
সোমবার ঝাড়খণ্ডের পুলিশ সূত্রে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানতে পারে, সে রাজ্যের লোহারডাগা এলাকার ব্যবসায়ী কমল গোপ ও গুমলার নন্দগোপাল রাইকে অপহরণ করে পুরুলিয়া সীমান্তলাগোয়া অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে চলে গিয়েছে অপহরণকারীরা। অপহৃতদের পরিবারের কাছে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। মুক্তিপণ না দিলে দুই ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনাক্রমে প্রযুক্তির সাহায্য এবং স্থানীয় সূত্র কাজে লাগিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, অপহরণকারীরা পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার বুরদা কালীমাটি রেঞ্জের বুকাডি এলাকায় অযোধ্যা পাহাড়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অপহৃত দুই ব্যবসায়ীকে আটকে রেখেছে। এর পর ঝালদার এসডিপিও-র নেতৃত্বে একাধিক বিশেষ দল গঠন করে ব্যবসায়ীদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের নিখুঁত পরিকল্পনা করে জেলা পুলিশ। নির্দিষ্ট ওই এলাকা থেকে যাতে অপহরণকারীরা পালাতে না পারে সে জন্য প্রতিটি রাস্তায় নাকা চেকিং শুরু করা হয়। পাহাড়ের ওই জায়গাটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে পুলিশের ছোট ছোট দল। তার পর পাহাড়ের মধ্যে থাকা অপহরণকারীদের গোপন ঘাঁটির দিকে এগোতে থাকে পুলিশ। তার পরেই উদ্ধার এবং গ্রেফতারি।
ওই অভিযান নিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রওনা দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমরা অপহরণকারীদের ডেরায় পৌঁছে যাই। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল অপহৃত ব্যবসায়ীদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। গোপন ডেরায় পৌঁছে প্রথমে আমরা অপহরণকারীদের হাত থেকে ওই দুই ব্যবসায়ীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করি। তার পরে দুই অপহরণকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলি। বেশ কয়েক জন ঘন অন্ধকার এবং পাহাড়ঘেরা জায়গায় লুকোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু তৎক্ষনাৎ চিরুনি তল্লাশি শুরু করে দিয়েছিলাম আমরা। তাই আরও দু’জনকে ধরা সম্ভব হয়।’’
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে খবর, অপহরণকারীদের চার জনই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাদের একটি চারচাকা গাড়ি এবং তিনটি বাইক আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শুধু ঝাড়খণ্ডের মধ্যে দুষ্কৃতী কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখেনি অভিযুক্তেরা। বাংলাতেও তারা দুষ্কৃতী কার্যকলাপ করত। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘খবর পাওয়ামাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারের পাশাপাশি আমরা চার অপহরণকারীকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। ধৃতেরা আন্তঃরাজ্য একটি অপহরণকারী দলের হয়ে কাজ করত। ওই দলে ঝড়খণ্ডের পাশাপাশি এ রাজ্যেরও কিছু দাগি দুষ্কৃতী যুক্ত রয়েছে। আমরা ধৃতদের আদালতে হাজির করি। আশা করি, দলের অন্যদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পারব।’’