Advertisement
E-Paper

হাতে-মুখে ঘা, অসুস্থ মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ জন পড়ুয়া

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এই রোগ শুরু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার গঙ্গাজলঘাটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল টিম এমটিপিএস হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্তদের মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
আক্রান্ত শিশুদের চামড়ায় এমনই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত শিশুদের চামড়ায় এমনই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

হাতে পায়ে ফুসকুড়ি ও মুখে ঘা বেরোচ্ছে। অনেকের আবার জ্বর আসছে। কিছু ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রণাও হচ্ছে। বেশ কিছু দিন ধরে এমনই সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে গঙ্গাজলঘাটির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কলোনি ও আশপাশের শিশুরা।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এই রোগ শুরু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার গঙ্গাজলঘাটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল টিম এমটিপিএস হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্তদের মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। পরিস্থিতি বিচার করে বুধবার থেকে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই স্কুলে প্রাক্ প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত চার দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এমটিপিএস হাসপাতালের ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘কক্সাকি ভাইরাসের প্রভাবে এই অসুখ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে এক জন প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়া বাকিরা সকলেই শিশু।’’

তিনি জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে চিন্তার তেমন কিছু নেই। বর্ষার সময়ে কক্সাকি ভাইরাসের প্রভাবে এই অসুখ ছড়ায়। ছোঁয়াচে বলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যেই রোগটি সেরে যায়। যদিও স্বাস্থ্য দফতর এখনই কক্সাকি ভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত কি না নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি। গঙ্গাজলঘাটির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপ সামন্ত বলেন, “অসুস্থ কয়েক জন শিশুর মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কক্সাকি ভাইরাসের কারণেই এই রোগ কি না তা নিশ্চিত হতে ওই লালার নমুনা পরীক্ষার জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আক্রান্ত শিশুরা এমটিপিএস কলোনির একটি স্কুলের প্রাক্‌ প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়া। ওই স্কুলেরই কেউ হয়তো ওই রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে অন্যেরাও আক্রান্ত হয় বলে মনে করা হচ্ছে। স্কুলের অধ্যক্ষ এম পি শর্মা বলেন, “পরিস্থিতি বুঝেই স্কুলে ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমস্ত অভিভাবকদের সতর্ক করে জানানো হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা কেউ আক্রান্ত হলে তাকে যেন কোনও ভাবেই যাতে স্কুলে পাঠানো না হয়।”

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কক্সাকি ভাইরাসে অসুস্থদের সঙ্গে ওই স্কুলের পড়ুয়াদের রোগের সামঞ্জস্য রয়েছে। মুখের ভিতরে ঘায়ের সঙ্গে হাত ও পায়ে ফুসকুড়ি বের হওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। মূলত ৪ থেকে ১০ বছরের শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে প্রাপ্ত বয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন। এমটিপিএস কলোনিতে আক্রান্ত এক শিশুর বাবাও এই রোগে অসুস্থ।

এ রোগের বিশেষ কোনও চিকিৎসাও নেই বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। প্যারাসিটামল, ভিটামিন ট্যাবলেট ও ফুসকুড়ির উপর বিশেষ মলমও লাগানো যেতে পারে। তবে শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখা খুবই জরুরি। তাই আক্রান্তদের ঘন ঘন জল খাওয়ানো উচিত। মূলত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই রোগটি সেরে যায়। হাঁচি, কাশি, স্পর্শ ও মল থেকে এই রোগ ছড়ায়। তাই আক্রান্তকে আলাদা ভাবে রাখলেই রোগটি ছড়ানো বন্ধ করা যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সঞ্জয়বাবু বলেন, “অসুস্থ শিশুকে স্কুলে না পাঠানোই উচিত। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর বাড়ির লোক দু’তরফেরই সচেতন হওয়া দরকার।”

বাঁকুড়া মেডিক্যালের শিশু চিকিৎসক দেবাশিস হেমব্রম বলেন, ‘‘এ ধরনের রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগীকে একটু আলাদা করে রেখে পরিচর্যা করাই উচিত। পরিচর্যা করার সময় নাক চাপা ও হাতেও গ্লাভস পরা ভাল। খোলা জায়গায় মলত্যাগ না করাই উচিত। কারণ মল থেকেই এই অসুখ ছড়ায়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।’’

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ব্লকের অন্যত্র এই রোগ ছড়িয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি। আক্রান্তেরা মূলত এমটিপিএস হাসপাতালে গিয়েই চিকিৎসা করিয়েছে। ওই হাসপাতালের পরিকাঠামো ভালো। তারপরেও দরকার পড়লে স্বাস্থ্য দফতর থেকে যাবতীয় সাহায্য করা হবে এমটিপিএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।”

বাঁকুড়া জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “কক্সাকি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী জেলায় খুব বেশি দেখা যায় না। গঙ্গাজলঘাটিতে ওই শিশুরা ঠিক কোন রোগে অসুস্থ তা পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে।’’

Scar Gangajalghati Rash Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy