Advertisement
E-Paper

প্রথম শিল্প সম্মেলনেই ছ’শো কোটি

টানা এক মাসের প্রস্তুতি এবং বণিক সভাকে নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগপতিদের সঙ্গে বৈঠক বাঁকুড়ার শিল্প-মানচিত্রে আশার আলো জাগালো। জেলায় প্রথম শিল্প সম্মেলন সিনার্জিতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা পড়ল প্রশাসনের ঘরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ০২:৩৬
মতামত: ড্রপবক্স-এ জমা পড়ছে ব্যবসায়ীদের চিঠি। নিজস্ব চিত্র

মতামত: ড্রপবক্স-এ জমা পড়ছে ব্যবসায়ীদের চিঠি। নিজস্ব চিত্র

টানা এক মাসের প্রস্তুতি এবং বণিক সভাকে নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগপতিদের সঙ্গে বৈঠক বাঁকুড়ার শিল্প-মানচিত্রে আশার আলো জাগালো। জেলায় প্রথম শিল্প সম্মেলন সিনার্জিতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা পড়ল প্রশাসনের ঘরে। যার মধ্যে রয়েছে ৩০৫টি ছোট, মাঝারি ও বড় প্রকল্প। এই সব প্রকল্পের কতটা শেষ অবধি বাস্তবায়িত হবে, তা সময় বলবে। কিন্তু, এই মাপের বিনিয়োগ প্রস্তাবও এর আগে রাঢ়বঙ্গের এই জেলা কখনও পায়নি—বলছে জেলা প্রশাসন।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কথায়, “জেলায় প্রকল্প গড়ার প্রস্তাব শিল্পপতিরা আমাদের দিয়েছেন। আমরা সব রকম ভাবে তাঁদের সাহায্য করব।’’ শিল্প গড়ার পথে জমি যাতে অন্তরায় না হয়, সেই লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন ব্লকে পড়ে থাকা খাসজমির যাবতীয় তথ্য সংবলিত একটি বই এ দিন জেলাশাসক প্রকাশ করেন। তিনি জানান, শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটেও ওই তথ্য আপলোড করে দেওয়া হবে। শিল্পে আগ্রহীরা ওয়েবসাইট থেকেও জমির তথ্য পেতে পারেন।

শুক্রবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত সিনার্জিতে প্রায় সাতশো উদ্যোগপতি উপস্থিত ছিলেন। জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের কাছে শিল্প গড়তে গিয়ে যে সব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা তুলে ধরেন উদ্যোগপতিরা। যেমন জেলা হিমঘর মালিক সমিতির সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, অল্প ঝড়বৃষ্টিতেই দিনের পর দিন লোডশেডিং চলছে। এতে সমস্যায় পড়ছেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় বিদ্যুৎ সারাইয়ে নিযুক্ত ঠিকাদারদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ডেকে এনে সারাই কাজ করাতে হচ্ছে হিমঘর মালিকদের। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবি করেন তিনি। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের মঞ্চেই জবাব দিতে বলেন জেলাশাসক। সমস্যা মেটানোর পথ খুঁজতে হিমঘর মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকেরা।

সিনার্জির মঞ্চে কিছুটা তাল কাটে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র বক্তব্যে। তিনি বলেন, “বাজারে বালির দাম হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। তা হলে বালি ঘাটের ই-অকশন (ইন্টারনেটে নিলাম) করে রাজস্ব বৃদ্ধি করে আর কী লাভ!’’ ঘটনা হল, বালিঘাট নিলামের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগ এড়াতেই ই-অকশনের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। এর ফলে বালিঘাট নিয়ে দুর্নীতিতে কিছুটা রাশ টানা সম্ভব হয়েছে বলেও মত প্রশাসনের। এমন অবস্থায় শাসকদলেরই সাংসদের এ হেন মন্তব্য কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন প্রশাসনিক কর্তারা। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ।

বড়জোড়া-মেজিয়ার কলকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রক মেশিন ইএসপি ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে প্রায়ই অভিযোগ তোলেন এলাকার বাসিন্দারা। সৌমিত্রবাবু এ দিন সেই প্রসঙ্গও তোলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ইএসপি চালাচ্ছেন না বিদ্যুৎ বেশি খরচ হয় বলে। আমরা চোখ বন্ধ করে রয়েছি। তবে, নির্মল বাংলা প্রকল্পে এলাকায় অন্তত কিছু শৌচালয় গড়ে দিন।’’ কেন জেলা প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না, জানতে চাওয়া হলে মৌমিতাদেবীর জবাব, “সাংসদ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

সিনার্জি নিয়ে কী ভাবছে বণিকসভা?

বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সম্পাদক (ইন্ডাস্ট্রিজ) প্রবীর সরকার বলেন, “প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় নানা সমস্যা উঠে এসেছে। সব ক্ষেত্রেই দেখলাম, জেলা ও রাজ্যের কর্তারা ওই সব সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। এর পরেও ব্লক স্তরে যদি আমলাদের মানসিকতার বদল না হয়, তাহলে শিল্প হওয়া মুশকিল।’’ ওই বণিকসভার সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “শিল্প গড়তে উৎসাহ দেখিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। এ বার দেখার, প্রশাসন তাঁদের পথ সহজ করতে কতটা উদ্যোগী হয়।’’ জেলাশাসকের আশ্বাস, যে-সব উদ্যোগপতি জেলায় প্রকল্প গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে। সমস্যা থাকলে তার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

Industrial conference
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy