E-Paper

মেলায় বন্যপ্রাণী রক্ষার বার্তা দেন কাঠমিস্ত্রি রঞ্জন

বছর বিয়াল্লিশের রঞ্জন বলেন, ‘‘গত আট বছর ধরে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতনতার পাঠ দেওয়ার চেষ্টা করছি। স্কুলে পড়ার সময় ব্রতচারীর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩২
মেলায় রঞ্জনের জীব বৈচিত্রের প্রদর্শনী ক্ষেত্র।

মেলায় রঞ্জনের জীব বৈচিত্রের প্রদর্শনী ক্ষেত্র। নিজস্ব চিত্র।

পাতা ঝরার মরসুমে এখন হামেশাই জঙ্গলে দুষ্কৃতীরা আগুন লাগাচ্ছে। গাছপালা ছাড়াও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্য জীবজন্তু। তাই বন্যপ্রাণী হত্যা রুখতে মেলায় মেলায় ঘুরে সচেতনতার বার্তা দিয়ে বেড়াচ্ছেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রের এক কাঠমিস্ত্রি। তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করছে বন দফতরও।

পাত্রসায়রের নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বারাসাত গ্রামের অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ রঞ্জন বৈরাগী নিজের তৈরি কাঠের সামগ্রী বিক্রি করতে রাজ্যের বিভিন্ন মেলায় দোকান দেন। সঙ্গে নিয়ে যান জঙ্গলের মডেল। কাঠের তৈরির বাঘ, ভালুক, হরিণ। এ সব মডেলের সাহায্যে দর্শকদের বোঝান, কেন বন্যপ্রাণী হত্যা উচিত নয়। জীববৈচিত্রের গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। প্রায় দেড় হাজার বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে তাঁর এই প্রদর্শনী ক্ষেত্র। সেখানে রাখা থাকে কাঠের তৈরি শকুন ও বাবুইয়ের মতো নানা পাখিও। যে সব পাখি এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে।

বছর বিয়াল্লিশের রঞ্জন বলেন, ‘‘গত আট বছর ধরে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতনতার পাঠ দেওয়ার চেষ্টা করছি। স্কুলে পড়ার সময় ব্রতচারীর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল সমাজের জন্য কিছু করা দরকার। বছর বারো আগে হঠাৎ মনে হয়েছিল, বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে সচেতনতার প্রচার করলে কেমন হয়। তারপরেই জামশেদপুরে গিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসি।’’ এরপরে নিজের হাতেই তৈরি করেন প্রদর্শনীর মডেল।

তিনি জানান, গত আট বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে গিয়ে সচেতনতা প্রচার করছেন। বন্যপ্রাণী নিয়ে শিশুদের মনে ভালোবাসা জাগাতে লিখেছেন বেশ কিছু সচেতনতামূলক কবিতাও। সেই কবিতাগুলির প্রচারপত্র মেলায় মেলায় ঘুরে শিশুদের হাতে তুলে দেন। শিশু-কিশোরদের পশুদের ভালবাসতে শেখান।

সম্প্রতি পাত্রসায়রের রসুলপুরের মেলায় এই প্রদর্শনী দেখা অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সলমান শেখ বলে, ‘‘খুব আকর্ষণী প্রদর্শনী। বন্ধুদের ও বড়দের বোঝাব যাতে বন্যপ্রাণী হত্যা না করেন। এলাকায় হাতি, বানর ঢুকে পড়লে তাদের যেন বিরক্ত না করে।’’ পাত্রসায়রের বেলুট গ্রামের সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, জঙ্গল থেকে তাঁদের লোকালয়ে মাঝে মধ্যে নানা বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ে। হাতির পালের আনাগোনাও রয়েছে। তাই এই সচেতনতা প্রচার খুব কাজের।

মেলায় প্রদর্শনীতে সময় দিতে গিয়ে বিক্রিবাটায় ক্ষতি হয় না? রঞ্জনের জবাব, ‘‘প্রথম প্রথম নিজের খরচেই বিভিন্ন মেলায় যেতাম। এখন অনেক মেলা কমিটি এই প্রদর্শনীয় জন্য কিছু খরচপাতি দেয়। নিখরচায় দোকান করতে দেয়।’’ পাত্রসায়রের রেঞ্জ আধিকারিক সুপ্রিয় চৌধুরী বলেন, ‘‘উনি ভাল কাজ করছেন। মেলায় তাঁর কাজ দেখেছি। মানুষ যত সচেতন হবেন, ততই ভাল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

patrasayer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy