Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিকল্পনা কষে ধর্ষণ করে খুন ছাত্রীকে, ধৃত সহপাঠিণী-সহ তিন

বাড়ির কাছে পুকুরপাড়ের ঝোপে মিলেছিল এক কিশোরীর পচন ধরা অর্ধনগ্ন দেহ। সেই ঘটনার দু’দিনের মাথায় নিহত কিশোরীর বান্ধবী, তার আত্মীয়া এবং এক যুবককে গ্রেফতার করল বাঁকুড়ার তালড্যাংরা থানার পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে খুনের কারণ জানতে পেরে তাজ্জব তদন্তকারীরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
Share: Save:

বাড়ির কাছে পুকুরপাড়ের ঝোপে মিলেছিল এক কিশোরীর পচন ধরা অর্ধনগ্ন দেহ। সেই ঘটনার দু’দিনের মাথায় নিহত কিশোরীর বান্ধবী, তার আত্মীয়া এবং এক যুবককে গ্রেফতার করল বাঁকুড়ার তালড্যাংরা থানার পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে খুনের কারণ জানতে পেরে তাজ্জব তদন্তকারীরাও।

২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়িতেই নিজের পিসির বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল তালড্যাংরা থানা এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরী। চার দিন পরে বৃহস্পতিবার দেহ মেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর। পরিবারের দাবি ছিল, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। পুলিশ তার পরিচিতজনদের সঙ্গে সহপাঠীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশের দাবি, নিহতের ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী জেরার মুখে ভেঙে পড়ে স্বীকার করে, সে ও তার আত্মীয়া সরস্বতী দুলে প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার নাম করে ২২ তারিখ রাতে বাড়ি থেকে ছাত্রীটিকে বের করে এনেছিল। পরে প্রবীর নামে ওই প্রেমিক যুবক ছাত্রীটিকে গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পরে খুন করে।

প্রবীর অবশ্য ওই যুবকের আসল নাম নয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নারায়ণ বাউরি নামের যুবকটি পাশের ইঁদপুর থানার রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা। শনিবার রাতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “প্রেমের সম্পর্কের জেরেই ওই ছাত্রীকে খুন হতে হয়েছে। ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ওই কিশোরীর সহপাঠিণী ও তার আত্মীয়া। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে যে খুন করেছে, তার নিজের মেয়েই ক্লাস নাইনে পড়ে! তদন্তে সব সামনে আসার পরে আমরাও অবাক।’’

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাস ছয়েক আগে নিহত ছাত্রী, তার বান্ধবী ও সরস্বতীর সঙ্গে ইঁদপুর বাংলা এলাকায় একটি মেলায় নারায়ণের পরিচয় হয়। সে নিজের নাম জানিয়েছিল প্রবীর। সরস্বতীর স্বামী ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করেন। সেই সুযোগে সরস্বতীর বাড়িতে নারায়ণের আনাগোনা শুরু হয়। একে একে ওই যুবকের সঙ্গে সরস্বতী ছাড়াও ওই দুই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরার মুখে জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীটি বিয়ের জন্য ওই যুবককে চাপ দিতে থাকে। সে জন্যই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে তিন জন। বেছে নেওয়া হয় ওই কিশোরীর পিসির বিয়ের দিন।

পুলিশ জানাচ্ছে, ওই দিন সকালে সরস্বতী ছাত্রীটিকে ফোন করে বোঝায়, সন্ধ্যায় বিয়ের আসরের হইচইয়ের মধ্যে নারায়ণের সঙ্গে সে পালিয়ে গেলে কেউ টের পাবে না। সন্ধ্যায় বান্ধবী এসে ছাত্রীটিকে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নারায়ণ অপেক্ষা করছিল।

পুলিশের দাবি, নারায়ণ জেরায় জানিয়েছে, ছাত্রীটিকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে সে খুন করে। গ্রামেরই কেউ খুন করেছে, এটা বোঝাতে মেয়েটির দেহ বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যায়। তবে, পুলিশ বাকি দু’জনকে ধরলেও প্রবীর ওরফে নারায়ণের হদিস পেতে কিছুটা বেগ পায়। সরস্বতী পুলিশকে জানিয়েছিল, মাসখানেক আগে একটি ঝামেলায় ইঁদপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সূত্র ধরে, ওই ঘটনার ফাইল খুলে পুলিশ নারায়ণের ঠিকানা পায়। নিহত ছাত্রীটির বাবা অবশ্য বলেন, ‘‘আমার মেয়ের সঙ্গে কোনও যুবকের সম্পর্ক ছিল না। যারা এই কাজ করেছে, তাদের চরম সাজা চাইছি।’’

সরস্বতী ও নারায়ণকে রবিবার খাতড়া আদালতে এবং ধৃত নাবালিকাকে বাঁকুড়ার জুভেনাইল আদালতে তোলা হয়। প্রথম দু’জনের এক দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। নাবালিকাকে হোম পাঠানো হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Plan Rape Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy