Advertisement
E-Paper

কন্যাভ্রূণ হত্যা রুখতে বার্তা স্কুলের সরস্বতী পুজোয়

এ বার ওই স্কুলের সরস্বতী পুজোর থিম— ‘সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড’। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:২০
আয়োজন: আলপনা দিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। পিছনে কন্যাভ্রূণ হত্যা রোখার বার্তাবহ মূর্তি। সিউড়ির স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র

আয়োজন: আলপনা দিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। পিছনে কন্যাভ্রূণ হত্যা রোখার বার্তাবহ মূর্তি। সিউড়ির স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র

পুরুষের তুলনায় মহিলার অনুপাত অন্য রাজ্যের তুলনায় ভাল পশ্চিমবঙ্গে (সরকারি হিসেবে ১০০০ এর মধ্যে ৯৫০)। তবে এ রাজ্যে কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। সমাজের সেই অন্ধকার দিক নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরস্বতী পুজোকে বেছে নিল সিউড়ির অজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ বার ওই স্কুলের সরস্বতী পুজোর থিম— ‘সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড’। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।

অন্য বারের মতো এ বারেও স্কুলের উপাসনাগৃহে নিজের হাতে প্রতিমা গড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস। সহযোগিতায় ছিল ছাত্রেরা। শুক্রবারের আগেই প্রতিমার কাজ শেষ। দেবী সরস্বতীর হাতে বীণা নয়, রয়েছে এক সদ্যোজাত কন্যাসন্তান। সামনে হাতে হাত দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছাত্রীরা। সামনে পড়ে বহু কন্যাভ্রূণ। তাদের সামনে কাঁটা তারের বেড়া। বার্তা একটাই— ‘মেয়ে হলেই যেন কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে যেতে হবে।’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে সিউড়ি ১ ব্লকের পিছিয়ে থাকা এলাকায় এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৭ সালে দীনবন্ধুবাবু জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে অজয়পুর স্কুলে যোগ দেন। সে বার শাড়ি দিয়ে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ হয়েছিল। সেই ধারাই বদলাতে চেয়েছিলেন ওই শিক্ষক। তিনি শখে প্রতিমা গড়া শিখেছিলেন। তিনিই স্কুলে পড়ুয়াদের সহযোগিতায় ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতি বছর প্রতিমা গড়ার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন।

তবে নিছক সরস্বতী প্রতিমা গড়ার জন্য নয়, সমাজ সচেতনতার বার্তা নিয়েই থাকে সরস্বতী প্রতিমার থিম। এর আগে কখনও বিপন্ন প্রকৃতি বন্যপ্রাণ, কখন নির্ভয়া কাণ্ড, কখনও ড্রাগের নেশা সর্বনাশা, কোনও বার যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ছিল পুজোর থিম।

এ বারও টানা দু’মাস ধরে ছয় ছাত্রের সহযোগিতায় প্রতিমা গড়েছেন তিনি।। একই বিষয় নিয়ে কোলাজ গড়েছেন বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকেরা। ছাত্রীদের নিয়ে মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।

কিন্তু হঠাৎ কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো বিষয় কেন? দীনবন্ধবাবু বলেন, ‘‘সমাজে এখনও মেয়েরা ছেলেদের সমান গুরুত্ব পায় না। মেয়েদের বোঝা মনে করেন অনেক পরিবার। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয় সমাজ। তা-ই কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। সেই জন্যই এমন ভাবা।’’

স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া সাহা, কবিউন্নেসা খাতুনদেরও নাড়িয়েছে ওই থিম ভাবনা। তারা বলে, ‘‘জন্মের আগে থেকে শুরু করে প্রতি পদক্ষেপে অনেক সময় মেয়েদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আমরাও যে ছেলেদের তুলনায় কোনও অংশে পিছিয়ে নেই, তা ভাবতে পারে না সমাজের একাংশ। এ বারের পুজোর থিম ভাবনা তাঁদেরও আঘাত করবে।’’

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘বেসরকারি ইউএসজি ক্লিনিক যাতে লিঙ্গ নির্ধারন না করে, সে বিষয়ে সচেতনতার প্রচার চলেই। কিন্তু তার পরেও আমাদের সন্দেহ এখনও জেলার কিছু ক্লিনিক তা জানায়। কন্যাভ্রূণ হত্যাও ঘটে। এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসে আমাদের ট্যাবলো-র বিষয়ও ছিল ‘সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড’। সেটা যদি কোনও স্কুল সরস্বতী পুজোর থিমে ফুটিয়ে তোলে সেটা সাধুবাদযোগ্য।’’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিস গড়াই বলছেন, ‘‘অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবনা। আমাদের স্কুলে মোট ৯৭৫জন পড়ুয়া। ছাত্রীর সংখ্যাই ৬৫ শতাংশ। তবে শুধু ছাত্রী নয়, ছাত্রদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে কিছু কর্তব্য রয়েছে, সেই বীজ বপণ করতে সাহায্য করবে এই থিম।’’

Saraswati Puja Suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy