Advertisement
E-Paper

কিশোরীর বিয়ে রুখতে ব্যর্থ প্রশাসন

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও হাত গুটিয়ে নিল পুলিশ-প্রশাসন। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক নাবালিকাকে ‘বিয়ে’ করে ঘরে তুলল পাত্র। শুক্রবার ময়ূরেশ্বর থানার বানাশপুর গ্রামের ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে প্রশ্নের মুখে জেলা পুলিশ-প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৭:২৭

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও হাত গুটিয়ে নিল পুলিশ-প্রশাসন। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক নাবালিকাকে ‘বিয়ে’ করে ঘরে তুলল পাত্র। শুক্রবার ময়ূরেশ্বর থানার বানাশপুর গ্রামের ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে প্রশ্নের মুখে জেলা পুলিশ-প্রশাসন।

শনিবার বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নড়াচড়া শুরু হতেই ঘটনায় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রশাসন সচেষ্ট। ওই বিয়ে অবৈধ। পুলিশ কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি, পুলিশ সুপারের কাছে তার খোঁজ নেব।’’ ময়ূরেশ্বরের ওই ঘটনায় বাল্যবিবাহ রোধ আইন অনুযায়ী নাবালিকার পরিবার এবং পাত্রপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দেবাশিস ঘোষও। পুলিশ-প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ না করলেও ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এলাকার সচেতন মানুষ।

ঘটনা হল, গত ৮ জুন একই রকম একটি ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ-প্রশাসন। জেলার কেন্দা থানা এলাকার একটি গ্রামে এক নাবালিকার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনের লোকের গ্রামে পৌঁছে দেখেন, তত ক্ষণে ‘বিয়ে’ সারা। সেখান থেকেই পুলিশ মধ্যপ্রদেশের সাত্তারপুর জেলার রেখা গ্রাম থেকে বিয়ে করতে আসা এক যুবককে আটক করে। পরে চাইল্ড লাইনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই যুবক, নাবালিকার বাবা এবং এক পড়শিকে গ্রেফতারও করে। ময়ূরেশ্বরের ঘটনায় বীরভূমের পুলিশ-প্রশাসনকে সমান সক্রিয় হতে কেন দেখা গেল না, তার সদুত্তর অবশ্য শনিবার মেলেনি।

ঠিক কী ঘটেছিল?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এক নাবালিকার বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুলিশ ও চার কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বানাশপুরে যান ময়ূরেশ্বর ১-এর যুগ্ম বিডিও নয়নতারা রক্ষিত। গ্রামে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন পৌঁছনোর আগেই ওই স্থানীয় হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর ‘বিয়ে’ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের ওই দলটি কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই ফিরে যায় বলে অভিযোগ। কেন কিছু করলেন না? সদুত্তর দিতে পারেননি নয়নতারাবাবু। তবে, এখন তাঁর দাবি, ‘‘বিয়ে হয়ে গেলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যাবতীয় কিছু করা হবে।” কী সেই ব্যবস্থা? এসডিও (রামপুরহাট) সুপ্রিয় দাসের দাবি, ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ময়ূরেশ্বর ১ বিডিও সুশান্ত দাস। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় তিনি কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি বলেই দাবি করেছেন ময়ূরেশ্বর থানার ওসি রাকেশ সাধুখাঁ। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অবশ্য ব্যাখ্যা, লিখিত অভিযোগ না পেলেও বাল্যবিবাহ রোধ আইন অনুযায়ী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করতে পারত পুলিশ। সে ক্ষেত্রে পুলিশই বা কেন কারও লিখিত অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশ সুপারের কাছ থেকে।

এ দিকে, ঘটনার কথা জানেন না বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল পরিচালিত ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, নাবালিকার পরিবারটিকে একপ্রস্থ বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বাপি দাস। তাঁর দাবি, ‘‘আমি আইনের কথা জানিয়ে ওদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পাত্রীপক্ষ আমার কথা শোনেনি।’’ একই দাবি করেছেন গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূল প্রভাবিত সংখ্যালঘু সেলের অঞ্চল সভাপতি আনাই শেখও। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘ওরা ঘর বন্ধ করে জোর করে বেআইনি এই কাজ করেছে। কিন্তু, পুলিশ-প্রশাসন তো ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই ব্যবস্থা এখনও কেন কার্যকর করা হল না, তা দেখে অবাক হচ্ছি!’’ এই ‘বিয়ে’ করানোর জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামের মসজিদের ইমামেরও।

অন্য দিকে, নাবালিকার মায়ের বক্তব্য, ‘‘স্বামী সৌদি আরবে কাজ করেন। বড় মেয়ে ছেলেটিকে ভালবাসে। তাই স্বামীর মত নিয়ে ওর বিয়ে দিয়েছি।” আর পাত্রের দাবি, ‘‘প্রশাসন বলছে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি। প্রশাসন বললে বয়স না হওয়া পর্যন্ত ওকে শাশুড়ির কাছে রাখতে আমার আপত্তি নেই।’’

Child-marriage police arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy