Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দিদির টানে সব হোটেলই ভর্তি

নোট বাতিলের চক্করে ভরা শীতেও মুকুটমণিপুরের পর্যটন-ব্যবসা ততটা জমছিল না। বড়দিন কেমন যাবে তা নিয়েও ধন্দ ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিনের মুকুটমণিপুর সফর পর্যটনের মরা গাঙে যেন বান ডেকে দিল।

মুকুটমণিপুরে নতুন স্টলে ক্রেতারা। ছবি:অভিজিৎ সিংহ।

মুকুটমণিপুরে নতুন স্টলে ক্রেতারা। ছবি:অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
মুকুটমণিপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

নোট বাতিলের চক্করে ভরা শীতেও মুকুটমণিপুরের পর্যটন-ব্যবসা ততটা জমছিল না। বড়দিন কেমন যাবে তা নিয়েও ধন্দ ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিনের মুকুটমণিপুর সফর পর্যটনের মরা গাঙে যেন বান ডেকে দিল। সরকারি অধিকারিক থেকে শাসকদলের জনপ্রতিনিধি, নেতা, দলীয় কর্মীদের জন্য বেসরকারি অতিথি আবাস, হোটেল, লজ, ডর্মিটরির সমস্ত ঘর ‘বুকড’ হয়ে যায়। খাবার ছোটখাটো হোটেলেও উপচে পড়ে ভিড়। বিক্রিবাটাও জমে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনদিনের জেলা সফরে এসে একধাক্কায় অনেকটাই পর্যটন ব্যবসার পালে হাওয়া লাগিয়ে দিয়ে গেলেন মুকুটমণিপুরে।

মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ তাপস মণ্ডল জানাচ্ছেন, ‘‘মুকুটমণিপুরের জলাধারে এ বার ভাল জল রয়েছে। ঠান্ডাও ভালই পড়েছে। কিন্তু নোট বাতিলের পর থেকে মুকুটমণিপুরে পর্যটক আসা কমে গিয়েছে। শুধুমাত্র ২৩-৩১ ডিসেম্বরের জন্যই লোকে হোটেল ভাড়া নিচ্ছিলেন। কিন্তু ডিসেম্বরের বাকি সময়টা হোটেলগুলো ঢু ঢু করছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর টানে লোকজন আসায় হোটেলগুলো হঠাৎ ভরে গেল।’’ মুকুটমণিপুরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১২টি হোটেল রয়েছে। তাপসবাবুর কথায়, সোম থেকে বুধ পর্যন্ত তার একটিও ফাঁকা ছিল না। বুধবার মমতা মুকুটমণিপুর ছাড়ার পরে হোটেলগুলো ফাঁকা হয়।

কেবল মুকুটমণিপুরেই নয়, ১০ কিলোমিটার দূরে মহকুমা সদর খাতড়াতেও যে কয়েকটি হোটেল রয়েছে তারও সবগুলি এই ক’দিন ভর্তিই ছিল। হোটেল ব্যাবসায়ীদের বক্তব্য, “ঝটিকা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী আমাদেরও অক্সিজেন দিয়ে গেলেন। প্রায় সুনসান অবস্থায় পড়ে থাকা হোটেল গুলিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। মমতা বুঝিয়ে দিলেন, চাইলে তিনি একাই যে কোনও জায়গার অর্থনীতি কিছুদিনের জন্য চাঙ্গা করে দিতে পারেন।’’

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কিছু বুকিং বাতিলও করতে হয়েছে। মুকুটমণিপুরের দু’টি বিলাসবহুল হোটেলের অন্যতম কর্ণধার প্রসেনজিৎ দত্তের কথায়, “যে কয়েকটি ঘরের ওই তিনদিনের মধ্যে আগাম বুকিং ছিল। এই পরিস্থিতিতে তা বাতিল করে তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের সবাই মুকুটমণিপুরে থাকতে না পেয়ে অনেকেই আশপাশের ব্লকের হোটেল, লজে চলে গিয়েছিলেন।”

মমতা জেলায় এলে বেশির ভাগ সময় বাঁকুড়া সদরেই ওঠেন। মুকুটমণিপুরে তিনি আগে কয়েকবার এলেও এত দীর্ঘসময় সেখানে কাটাননি বলেই মত প্রবীণ তৃণমূল নেতাদের। আর মমতার সফরকালে তাঁর সঙ্গে বরাবরই দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকে। ‘দিদি’র কাছে পৌঁছতে না পারার আক্ষেপ তাঁর দলের অনেক কর্মীই মুকুটমণিপুরের সৌন্দর্য দেখে ভোলার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ আবার তিনদিন বাড়ির বাইরে থাকায় গিন্নির ঘোঁষা কাটাতে স্টল থেকে ঘর সাজানোর নানা জিনিসপত্রও কিনেছেন। তাতে আখেরে বিকিকিনি বেড়ে গিয়েছে।

জেলা পরিষদ মুকুটমণিপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য স্টল গড়ে গিয়েছে। সফরে এসে সেই স্টলগুলির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার মুকুটমনিপুরে গিয়ে দেখা গেল উদ্বোধনের পরেই ওই স্টলগুলিতে হস্ত শিল্পের জিনিসপত্র কেনার ভিড় ভালই। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘দিদির সঙ্গে দেখা করার পরে কাউন্সিলরেরা মুকুটমণিপুরে চুটিয়ে কেনাকাটা করেছেন। দলীয় কাজ হল, আবার একটু ঘুরে নেওয়াও হল। এক যাত্রায় দিগুণ ফল।” মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিপুল সাউ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সুবাদে গত তিনদিন ধরে ভাল ব্যবসা পেলাম।’’

বাড়ি ফেরার সময় জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলে গেলেন, “জেলাকে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকার নতুন প্রকল্প উপহার দেওয়ার পাশাপাশি মুকুটমণিপুরে পর্যটনের হাওয়াও বইয়ে দিয়ে গেলেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hotels Packed up Mukutmanipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE