Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইঁদপুর

মদ্যপ ছেলেকে খুনের অভিযোগে ধৃত বাবা

কলকাতার গরফার শান্তনু চক্রবর্তী ও বাঁকুড়ার ইঁদপুরের রাজেশ পাত্রের মধ্যে মিল একটাই— তাঁরা নেশা করলে অন্য মানুষ হয়ে যেতেন। বাড়ি ফিরে তুলকালাম কাণ্ড করতেন। এমনকী বাড়ির লোকেদের মারধর পর্যন্ত করারও অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।

নিহত রাজেশ পাত্র।

নিহত রাজেশ পাত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

কলকাতার গরফার শান্তনু চক্রবর্তী ও বাঁকুড়ার ইঁদপুরের রাজেশ পাত্রের মধ্যে মিল একটাই— তাঁরা নেশা করলে অন্য মানুষ হয়ে যেতেন। বাড়ি ফিরে তুলকালাম কাণ্ড করতেন। এমনকী বাড়ির লোকেদের মারধর পর্যন্ত করারও অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।

দু’জনের পরিণতিও এক। দু’জনকেই খুন করার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের দ্বারাই অত্যাচারিত প্রিয়জনের বিরুদ্ধে।

ইঁদপুর থানার ছাতাপুর গ্রামে বাড়ির ছাদে শনিবার সকালে রাজেশ পাত্র (২৫) নামে এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁর বাবা-মায়ের আচরণ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে পড়শিদের মধ্যে। বাসিন্দারা পুলিশকে ঘেরাও করে পুলিশ-কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানায়। শেষ পর্যন্ত দুর্গাপুর থেকে পুলিশ কুকুর আনা হয়।

পুলিশ দাবি করেছে, ততক্ষণে নিহতের বাবা বিশ্বজিৎ পাত্র তাদের কাছে জেরায় ছেলেকে খুনের কথা কবুল করেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আপাতত রাজেশকে খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ পাত্রকে তাঁরই এক আত্মীয়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাতে গ্রেফতার করা হয়।’’ পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন নিহতের মা কবিতা পাত্র ও জেঠু মুরলী পাত্রকে।

এই ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে গরফার নস্করপাড়ার চক্রবর্তী পরিবারের। বাড়ির ছেলে শান্তনু রাতে নেশা করে এসে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ছেলেকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে সেই নেশাগ্রস্ত স্বামীকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

ইঁদপুরের রাজেশ বিশ্বজিৎবাবুর প্রথম পক্ষের ছেলে। তিনি ঝাড়খণ্ডের টাটা ও গুজরাটে রাঁধুনির কাজ, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। বাড়িতে থাকতেন বছর পঞ্চাশের বিশ্বজিৎবাবু ও বছর চল্লিশের স্ত্রী কবিতা। ভোটের আগে বাড়ি ফেরেন রাজেশ। পড়শিরা জানান, তখন থেকেই তাঁকে প্রায় দিনরাত নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখতেন পড়শিরা। রোজ রাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর অশান্তি লেগেই থাকত।

পড়শিরা জানাচ্ছেন, এ দিন সকালে বিশ্বজিৎবাবুই তাঁদের ছেলের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর দেন। বাসিন্দাদের দাবি, বাড়ির মধ্যে ছেলে খুন হলেও তার বাবা-মা কার্যত চুপচাপ ছিলেন। এমনকী তাঁদের মধ্যে তেমন শোক পড়শিদের চোখে পড়েনি। পুলিশের কাছে তাঁরা খুনের অভিযোগও জানাতে চাননি। এতে পড়শিদের মধ্যে সন্দেহ বাড়ে।

পুলিশ দেহ নিতে এলে তাঁরা বাধা দিয়ে পুলিশ-কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানাতে থাকেন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে গ্রামের হাজার খানেক বাসিন্দা ওই বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন।

গ্রামবাসীর দাবি মেনে থানার ওসি নিহতের বাবা-মায়ের জেরা শুরু করেন। পুলিশের দাবি, জেরায় ভেঙে পড়ে নিহতের বাবা তাদের জানান, রাজেশ নেশা করে এসে তাঁদের উপর অত্যাচার করতেন। শুক্রবার রাতে অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তাঁরা ঘুমন্ত রাজেশের মাথার পিছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করেন।

পুলিশ-কুকুর এসে মৃতদেহ শুঁকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর বাড়ির পাশে পুকুরে নেমে যায়। পুলিশের দাবি, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ওই পুকুরেই ফেলা হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

পাত্র পরিবারের এক আত্মীয়ের দাবি, মদ খেয়ে বাড়িতে চূড়ান্ত নোংরামি করতেন রাজেশ। তাঁর এই আচরণ সহ্য করতে পারছিলেন না তাঁর বাবা-মা। তবে তাঁর জেরে যে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটবে তা ভাবতে পারছেন না পাত্র পরিবারের পড়শিরা। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drunkard murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE