Advertisement
E-Paper

হাঁড়িয়ার টানে হাতি, সতর্কতায় ব্যানার

মদের গন্ধে জঙ্গলমহল ছেড়ে লোকালয়ে হাতির হানা নতুন নয়। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় স্রেফ মদের গন্ধের কারণেই হাতির হানায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মত্ত মানুষ। ইদানীং সেই মদের গন্ধেই আকৃষ্ট হয়ে হাতির হানাদারি বাড়ছে লোকালয়ে। বন দফতরের পর্যবেক্ষণ, মদের গন্ধ রয়েছে এমন সব এলাকায় বারবার হামলা চালাচ্ছে হাতির দল। এ বার তাই রীতিমতো পোস্টার ছাপিয়ে ও প্রচারপত্র বিলি করে বনকর্মীরা পুরুলিয়ার জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতিদের উৎপাত ঠেকাতে সতর্ক করতে নেমেছে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:০১
ঝালদার গ্রামে টাঙানো ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র।

ঝালদার গ্রামে টাঙানো ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র।

মদের গন্ধে জঙ্গলমহল ছেড়ে লোকালয়ে হাতির হানা নতুন নয়। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় স্রেফ মদের গন্ধের কারণেই হাতির হানায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মত্ত মানুষ। ইদানীং সেই মদের গন্ধেই আকৃষ্ট হয়ে হাতির হানাদারি বাড়ছে লোকালয়ে। বন দফতরের পর্যবেক্ষণ, মদের গন্ধ রয়েছে এমন সব এলাকায় বারবার হামলা চালাচ্ছে হাতির দল। এ বার তাই রীতিমতো পোস্টার ছাপিয়ে ও প্রচারপত্র বিলি করে বনকর্মীরা পুরুলিয়ার জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতিদের উৎপাত ঠেকাতে সতর্ক করতে নেমেছে।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের দিক থেকে আটটি হাতির একটি দল ঝালদায় ঢুকেছে। জঙ্গলের অনেক গ্রামেই হাঁড়িয়া ও মহুয়া বানানোর পেশায় যুক্ত অনেকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় মদের ঠেক। চোলাইও তৈরি হয় জঙ্গল লাগোয়া অনেক এলাকায়। এ দিকে হাতিদের ঘ্রাণশক্তি প্রবল। বন কর্মীদের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন গ্রামে হাতির দল হানা দিয়ে যেখানে ঘরবাড়ি ভেঙেছে সেখানে কোথাও ভিজে চাল রাখা ছিল, কোথাও ধান ভেজানো ছিল, কোথাও ধান সেদ্ধ করা হচ্ছিল, কোথাও বাংলা মদের ভাটি ছিল। দেখা গিয়েছে, একবার কোথাও এ ধরনের গন্ধ পাওয়ার পরে সেই এলাকায় হামলা চালানোর পরে ফের একাধিক হাতি সেখানে এসেছে। এক্ষেত্রে মনে করা হয়, ধান, চালের ভিজে গন্ধ বা চোলাই, হাঁড়িয়ার টানেই সেই জায়গায় বারবার ফিরে আসছে হাতিরা। তাই চোলাই, হাঁড়িয়ার ঠেকে হাতির হানা রুখতে বিশেষ ভাবে সতর্কতার প্রচারে নেমেছে বন দফতর।

পুরুলিয়ার কংসাবতী (দক্ষিণ) বিভাগের এডিএফও সমীরকুমার মজুমদার বলেন, ‘এলাকায় ‘হাতি ঢুকলে কী করবেন আর কী করবেন না এ ব্যাপারে সতর্ক করতে আমরা প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ গ্রামবাসীর হাতিদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে বিশেষ ধারণা নেই। তাই কৌতূহলে তাঁরা অনেক সময় নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন। তাই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের আমরা সতর্ক করতে প্রচার শুরু করেছি।’’ বন দফতরের পোস্টার, ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘ঘরে দেশি মদ রাখবেন না, মত্ত অবস্থায় হাতির কাছে যাবেন না। মদের গন্ধ হাতিদের আকৃষ্ট করে, ফলে বিপদ হতে পারে।’

জঙ্গল লাগোয়া যে সমস্ত গ্রামগুলিতে চোলাই বা মহুয়া তৈরি হয়, সেই সমস্ত গ্রামেই বেছে বেছে হানা দিচ্ছে হাতিরা এমন নজিরও রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়তলির একাধিক গ্রামে। বাঘমুণ্ডির বিট অফিসার মনোজকুমার মল্লের কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি হাতিরা হাঁড়িয়া বা মহুয়া তৈরির জায়গায় হানা দিয়ে ভাঙচুর করে। কোথাও নেশার পানীয়ও খেয়েছে তারা। গত শীতে পাহাড়তলির দুলগুবেড়া, বাড়ুয়াজারা এ রকম কয়েকটি গ্রামে হানা দিয়ে চোলাইয়ের ঠেকগুলিতেই হানা চালিয়েছিল হাতিরা। তাই আমরা গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছি যে চোলাই তৈরি করবেন না বা এ ধরনের মদ ঘরে রাখবেন না। বাড়িতে হাঁড়িয়া বা মহুয়া রাখলে হাতির হানার সম্ভাবনা বাড়ে। এমনকী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাতির কাছে গেলে জীবনহানিরও আশঙ্কা রয়েছে।’’

ইতিমধ্যেই বলরামপুর, ঝালদা, কোটশিলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের প্রচারে নামানো হয়েছে। ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সমীর বসুর কথায়, ‘‘আমাদের চেয়ে বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা ভালই জানেন কোথায় চোলাই, হাঁড়িয়া, মহুয়া তৈরি হয়। তাই তাঁদেরই প্রচারে নামানো হয়েছে।’’ ঝালদার বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য সঞ্জয় কুইরি, গণেশ পরামাণিকেরা প্রচারের কাজে নেমে বলছেন, ‘‘হাতির দল কোনও গ্রামে ঢুকলে সেই গ্রামে যদি মহুয়া বা চোলাইয়ের গন্ধ পায়, তাহলে বিপদ বেশি। তাই ও সব থেকে দূরে থাকাই ভাল।’’ বলরামপুরের রেঞ্জ অফিসার মানিক রায় জানিয়েছে, সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দিতে মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন।

শুধু কি নেশার গন্ধেই হাতিরা লোকালয়ে চলে আসছে?

আগে সাধারণত দেখা যেত দলমা থেকে হাতির পাল বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঢুকত। তবে বৃষ্টির পর গাছপালা সবুজে ধেয়ে যাওয়ার পরেই তাদের এই সব এলাকায় দেখা যেত। জলাশয়ে জলও পর্যাপ্ত পাওয়া যেত। এ ছাড়া, মাঠে ধানগাছ বাড়তে শুরু করলেও হাতির পাল ঢুকত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হাতিরা আর দলমামুখো হতে চাইছে না। প্রায় বছর ভর জেলায় থেকে যাচ্ছে। পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকাতেও হাতিদেরা আনাগোনা চলছে।

ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সমীর বসুর দাবি, ‘‘আগের থেকে এলাকায় চাষবাস বেড়েছে। তাই লোকালয়ে হাতিদের টান বেড়েছে।’’

বাজ পড়ে মৃত্যু। বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। মৃতের নাম শঙ্কর মণ্ডল (৫২)। তাঁর বাড়ি আদ্রা থানার চাকলতোড় গ্রামে। রবিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে চাকলতোড় গ্রামের অদূরে। পুলিশ জানিয়েছে, বিকেলে ধান খেতে চাষের কাজ করছিলেন শঙ্করবাবু। সেইসময়েই মেঘ করে বাজ পড়ায় ধান খেতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

elephant attack purulia village Prasanta pal jhalda rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy