Advertisement
E-Paper

জমিতে বিদ্যুতের তার, মৃত্যু যুবকের

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অলকের জমির পাশে বাদাম চাষের জমির চার পাশ লোহার তার দিয়ে ঘেরা। সেখানে বিদ্যুতের তার জোড়া রয়েছে। ওই তার টানা হয়েছে পাশের সাব-মার্সিবল পাম্প থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:০৪
চুয়াশোল জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র

চুয়াশোল জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র

নিজের জমিতে লাউ কাটতে গিয়ে পাশের জমিতে ঘিরে রাখা বৈদ্যুতিক তারের বেড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। পরে সেই দেহ মোটরবাইকে বেঁধে টানতে টানতে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মড়ার পঞ্চায়েতের ভিমারডাঙা গ্রামের ঘটনা। মৃত অলক ঘোষ (৩৫) ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয় চুয়াশোল জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে দেহটি উদ্ধার করে। মৃতের বাবা দিলীপ ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘিরে রাখা জমির চাষি সাকির আলি খান ও তাঁর কাকা সিরাজুল খানকে। তাঁদের বাড়ি মড়ারে।

বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ থেকে দুর্ঘটনায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তারপরে দেহটি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। আমরা খবর পেয়েই দেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠাই। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। তদন্ত চলছে।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অলকের জমির পাশে বাদাম চাষের জমির চার পাশ লোহার তার দিয়ে ঘেরা। সেখানে বিদ্যুতের তার জোড়া রয়েছে। ওই তার টানা হয়েছে পাশের সাব-মার্সিবল পাম্প থেকে। তবে ওই তার স্যুইচ বোর্ড থেকে খোলা ছিল। ভোরে বেরিয়েও সকাল পর্যন্ত অলক বাড়ি না ফেরায় তাঁর খোঁজ করতে বেরোন স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন মণ্ডল, মৃতের দাদা অশোক ঘোষেরা। তাঁদের দাবি, তার দিয়ে ঘিরে রাখা জমির চাষি সাকির আলি খান। সাব-মার্সিবল পাম্পটিও তাঁর।

মনোরঞ্জনের দাবি, ‘‘অলোকের জুতো জোড়া পড়েছিল লাউ খেতের সামনে সাকিরের বাদাম খেতের পাশে। বাদাম খেতের চার দিক ঘিরে রাখা লোহার তারে বিদ্যুতের তারের সংযোগ ছিল। আমাদের অনুমান, রাতে জমিতে পশু-পাখি আটকাতে সাকির বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছিল। ভোরে কম আলোয় কোনও ভাবে সেই তারে স্পর্শে অলোক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে।’’

অশোক ঘোষের দাবি, ‘‘ভিজে মাটিতে ভারী কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ অনুসরণ করে আমরা প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চুয়াশোল শাল জঙ্গলে ঢুকি। রাস্তার পাশে ভাইয়ের গামছা পড়েছিল। আরও কিছুটা যেতেই দেখি, শাল জঙ্গলের ডালপালা ভাঙা। দু’টো শিয়াল জঙ্গলের ভিতরে এক জায়গায় মাটি খুঁড়ছিল। সেখানে গিয়ে দেখি, মানুষের হাঁটুর একটুখানি বেরিয়ে আছে। পুলিশকে খবর দিই।’’

দেহ মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনা চাউর হতেই স্থানীয় বাগডোবা, চুয়াশোল, ভিমারডাঙা, বাসুদেবপুর, কুলুপুকুর থেকে মানুষজন এসে ভিড় করেন। পুলিশ এলে দেহ তুলতে বাধা দেন এলাকাবাসী। পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা বাধে। পরে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান এলে তাঁকেও বাধা দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের শাস্তির আশ্বাস দেওয়ার পরে দেহ তুলতে দেওয়া হয়। নিয়ম মেনে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের ময়না-তদন্ত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাসুদেবপুরের বাসিন্দা বামাপদ লোহার, স্বপন দুলেরা বলেন, ‘‘ভিমারডাঙা এলাকায় আমাদের জমিজমা রয়েছে। যা ঘটল, তাতে আমরাও ভীত।’’

অলোকের বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা ও তিন নাবালক সন্তান, স্ত্রী রয়েছেন। এ বার কী ভাবে তাঁদের সংসার চলবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পরিবারের লোকেরা। ছেলের দেহ উদ্ধারের পরে মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করছিলেন অলোকের মা রেখা ঘোষ। তাঁর স্ত্রী কাকলি জ্ঞান হারিয়েছেন। তাঁর বাবা দিলীপ ঘোষও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছেন। পুলিশ সুপার জানান, তাঁরা পরিবারটির পাশে রয়েছেন।

Electrocution Bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy