Advertisement
E-Paper

খুনে অভিযুক্ত অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নেতা খুন বীরভূমে

বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতাকে খুনের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যায় বীরভূমে খয়রাশোলে বাড়ির কাছেই গুলিতে খুন হলেন তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রামে অশোকবাবুর বাড়ি থেকে শ’খানেক মিটার দূরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেন।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৮
অশোক মুখোপাধ্যায়ের দেহের সামনে তাঁর শোকার্ত দিদি কৃষ্ণা অধিকারী। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র

অশোক মুখোপাধ্যায়ের দেহের সামনে তাঁর শোকার্ত দিদি কৃষ্ণা অধিকারী। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র

বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতাকে খুনের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যায় বীরভূমে খয়রাশোলে বাড়ির কাছেই গুলিতে খুন হলেন তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়।

বছর পঞ্চান্নের অশোকবাবু তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। এর আগে বিরোধী গোষ্ঠীর অনেকে খুন হলেও অনুব্রত-অনুগামী কোনও বড় মাপের নেতা সাম্প্রতিক কালে খুন হননি। অশোকবাবু নিজেও বিরোধী পক্ষের নেতা অশোক ঘোষ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। অনুব্রত বলেন, “এটা আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। কাল অশোকের বাড়িতে পুজো আছে। যত দূর জানি, ও পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিল। তার পরেই এই কাণ্ড।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রামে অশোকবাবুর বাড়ি থেকে শ’খানেক মিটার দূরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া রাতে বলেন, “ওঁকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে আমরা জেনেছি। কিন্তু কতগুলো গুলি লেগেছে, এখনই বলতে পারছি না।”

নিহত নেতার দিদি কৃষ্ণা অধিকারী ও ভাই রজত মুখোপাধ্যায় জানান, বাড়িতে মনসা পুজো থাকায় রাত সওয়া ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে শ’খানেক মিটার দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া ফলের দোকানে গিয়েছিলেন অশোকবাবু। সঙ্গে পুলিশের দেওয়া দেহরক্ষী থাকলেও তিনি কিছুটা তফাতে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত ৮টা ২০ নাগাদ হঠাৎই রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের দিক থেকে দু’টি মোটরবাইকে চার জন এসে হাজির হয়। পরপর কয়েকটি গুলি ছুড়ে পাঁচড়া পঞ্চায়েতের চন্দননগর গ্রামের দিকে চলে যায় তারা। যাওয়ার আগে একটি বোমাও ছুড়েছিল তারা। তবে সেটি ফাটেনি। পরে পুলিশ এসে সেটি নিষ্ক্রিয় করে।

রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গেরুয়া পাঞ্জাবি সাদা পাজামা পরা অশোকবাবুর দেহ একটি আলুর বস্তার পাশে পড়ে রয়েছে। মাথার বাঁ দিক থেকে রক্তের স্রোত বইছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গুলি চলার সময়ে চাপা ‘ফট ফট’ শব্দ পেয়েছিলেন তাঁরা। যা থেকে পুলিশের অনুমান, আততায়ীরা সাইলেন্সর লাগানো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে কে বা কারা এই খুনের পিছনে থাকতে পারে, তা রাত পর্যন্ত পুলিশ জানাতে পারেনি। খয়রাশোলে কয়লার চোরাকারবার না গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, না কি অন্য কোনও কারণে এই খুন তা-ও পরিষ্কার হয়নি।

গত বছর ১২ অগস্ট খুন হয়েছিলেন খয়রাশোলের আর এক তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ। তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব দলেও কারও অজানা ছিল না। খুনের পরেই প্রধান অভিযুক্ত অশোক মুখোপাধ্যায় বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই পুলিশ তাঁকে ধরছে না বলেও অভিযোগ তোলেন নিহত নেতার পরিবারের লোকজন।

লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই সিউড়ি আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়। ভোটের পরে তাঁকে এলাকায় দেখা যেতে থাকে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, অশোক ঘোষ খুনের পরে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল, তার জেরে অশোক মুখোপাধ্যায়কে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার বদলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়ে তাদের হাতে ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

জেলা নেতাদের একাংশের আক্ষেপ, এর পরেও অশোকবাবুকে বাঁচানো গেল না। অনুব্রত বলেন, “খয়রাশোলে আমাদের ভাল কর্মী অশোক ঘোষ খুন হয়েছিলেন। তার পরে অশোক মুখোপাধ্যায়ের এ ভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। পুলিশকে বলেছি, দোষীদের যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বার করতে।”

ashok mukhopadhyay ashok dayal birbhum ashok mukhopadhyay murder murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy