Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্র কারখানা মিলল সেই খয়রাশোলেই

বোমা, বন্দুক, খুন, বিস্ফোরণ —এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা, খয়রাশোল ব্লকের সঙ্গে এগুলো প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদ্ধার: মিলেছে বন্দুক বানানোর এই সব যন্ত্রপাতি। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

উদ্ধার: মিলেছে বন্দুক বানানোর এই সব যন্ত্রপাতি। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

বোমা, বন্দুক, খুন, বিস্ফোরণ —এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা, খয়রাশোল ব্লকের সঙ্গে এগুলো প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার সকালে পুলিশ অভিযানে ওই ব্লকের বনপাতরা গ্রামে মিলল দেশি পাইপগান বানানোর একটা ছোটখাট অস্ত্র কারখানার হদিস। হাপর, ছোট লেদ মেশিনের মতো নানা যন্ত্র-সহ ১০টি নির্মীয়মাণ দেশি পাইপগানের যন্ত্রাংশ, একটি পুরানো পাইপগান উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও অস্ত্র বানানোয় অভিযুক্ত উধাও! পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

যার খামার বাড়ির গোয়াল ঘরের মধ্যেই অস্ত্র কারখানা সেই ইয়ার মহম্মদ খান ওরফে ভেলা খান নামে অভিযুক্ত প্রৌঢ় পালিয়ে গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ঠিক কবে থেকে এমন অস্ত্রের কারবার সে চালাচ্ছিল সেটা জানার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার করা হবে ভেলাকে।’’

পুলিশে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একজন দাগী অপরাধী হিসাবে এলাকায় ও পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে ইয়ার মহম্মদের। মাস কয়েক আগেও অস্ত্র সহ খয়রাশোল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটে এসেছে সে। কিন্তু বাড়িতে অস্ত্র তৈরির বিদ্যায় যে সে পারদর্শী, তা দেখে অবাক পুলিশ আধিকারিকেরাও। পুলিশ সূত্রে খবর, জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বিভিন্ন থানা এলাকায় দুষ্কৃতী ও সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করতে এবং অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করার জন্য প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ মেনে খয়রাশোল থানার পুলিশ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই গ্রামে অভিযান চালাতে আসে। তখনই অস্ত্র-কারখানার বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ দেখে, বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে খামারবাড়ির মধ্যেই রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়েই চলছিল দেশি পাইপগান বানানোর কারবার।

হঠাৎ ভেলাকেই কেন নিশানা করল পুলিশ? জেলার এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ভেলা এমনিতেই সন্দেহের তালিকায়। তারপর সপ্তাহ দু’য়েক আগে ওর বড় মেয়ের জামাই শেখ আমিরকে শ্বশুরবাড়িতে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে মিলেছিল ১০ কেজি বিস্ফোরক। যদি আরও কিছু মেলে সেটা দেখতে গিয়েই অস্ত্র কারাখানার সন্ধান মিলল। যদিও অভিযুক্তের পরিজনেদের দাবি, তাঁদের কোনও শত্রুর কাজ এটা। ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয় ভেলা। বর্তমানে অসুস্থও বটে। দিনচারেক আগেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। ভেলা খানের স্ত্রী জারান বিবি বলছেন, ‘‘স্বামী ও সব কারবার থেকে সরে এসেছে।’’ তাঁর দাবি, বুধবার সকালে তাঁদের খামার বাড়ির গোয়াল ও খড়ের পালুই থেকে পুলিশ যা কিছু উদ্ধার করেছে সবটাই শত্রু পক্ষের রাখা। কিন্তু কে এ কাজ করল সেটা অবশ্য খোলসা করেননি জারান বিবি।

খয়রাশোলে এমন দেশি অস্ত্রে ভরে রয়েছে। ব্লকের তিনটি থানা খয়রাশোল কাঁকরতলা ও লোকপুর সর্বত্রই দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি। বেআইনি কয়লা কারবারই হোক বা এলাকার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ— সব ক্ষেত্রে এগিয়ে সমাজবিরোধীরা। অস্ত্রের জন্য পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ করলেই দেশি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে চলে আসছে। পুলিশের অনুমান, ভেলা সম্ভবত তেমন সমাজবিরোধীদের অর্ডারে পাইপগান তৈরি করছিল।

অস্ত্র তৈরির ঘরোয়া কারখানার হদিস মিলতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। খয়রাশোলের তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভেলা ফব-র সমর্থক। খয়রাশোলের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোণঠাসা বিরোধী শিবির অস্ত্রের উপর ভর করে আসরে নামতে চাইছে এটা তারই প্রস্তুতি। অন্য দিকে ফব নেতা তথা এলাকার প্রক্তন ফব বিধায়ক বিজয় বাগদির দাবি, ‘‘যে অভিযুক্তের কথা বলা হচ্ছে সে কখনই আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। ওই গ্রামে একজন মাত্র ফব সমর্থক রয়েছে। বাকিরা সকলেই শাসকদলে নাম লিখিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আর কেউ যাতে মাথা তুলতে না পারে, বিরোধীদের ভয় দেখাতেই তৈরি হচ্ছিল অস্ত্র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arms factory Khoirashol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE