Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মঞ্চে উঠতে হলে দিতে হবে ‘অডিশন’

পর্যটন, সংস্কৃতি ও হস্তশিল্পের প্রসার ও প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে তিন দশক ধরে বিষ্ণুপুর মেলা হয়ে আসছে। হস্তশিল্পের সঙ্গে সমান গুরুত্ব পায় গান, নাচ প্রভৃতি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিষ্ণুপুর মেলায় শিল্পী নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ছিল। তা মুছতেই এ বার এই পোড়ামাটির হাটে আগ্রহীদের বাছাই করে নেওয়া হবে। নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুর মেলায় শিল্পী নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ছিল। তা মুছতেই এ বার এই পোড়ামাটির হাটে আগ্রহীদের বাছাই করে নেওয়া হবে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

অডিশনের বেড়া পার করতে পারলে তবেই বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চে উঠতে পারবেন শিল্পীরা। এ বার এমনই নিয়মে বাঁধা পড়তে চলেছে মেলা। আয়োজকদের বক্তব্য, এতে মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মান বাড়াবে। পাশাপাশি যোগ্য ব্যক্তিরাও নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার মঞ্চ পাবেন।

পর্যটন, সংস্কৃতি ও হস্তশিল্পের প্রসার ও প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে তিন দশক ধরে বিষ্ণুপুর মেলা হয়ে আসছে। হস্তশিল্পের সঙ্গে সমান গুরুত্ব পায় গান, নাচ প্রভৃতি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাঁচ দিন ধরে মেলা চত্বরে গোপেশ্বর, রামানন্দ, যদুভট্ট ও যামিনী রায় মঞ্চে একই সঙ্গে বাঁকুড়ার বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। বাইরে থেকেও অনেকে অনুষ্ঠান করতে আসেন। সব মিলিয়ে শিল্পীদের সংখ্যা কমবেশি চারশো। উপস্থিত দর্শকেরা তো বটেই, বাইরে থেকে বিষ্ণপুর ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও রাঢ় বাংলার লোক-সংস্কৃতির মনোরঞ্জন নেবার সুযোগ পান।

কিন্তু প্রায়ই শিল্পী নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিত। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছিল, মেলা কমিটির ঘনিষ্ঠ বা শাসকদলের (যে যখন রাজ্যের ক্ষমতায়) নেতাদের বদান্যতায় অনেকেই বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চে ওঠার সুযোগ পেয়ে যান। যদিও প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ অনুষ্ঠান করার সুযোগ পান না।

এ বার সেই ছবিটা বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বার ৩১তম বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর। চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে বিষ্ণুপুর মেলায় আর সরাসরি অনুষ্ঠান করা যাবে না। শিল্পীদের মঞ্চে ওঠার ছাড়পত্র জোগাড়ের জন্য বসতে হবে অডিশনে।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল জানান, পোড়ামাটির হাটে হবে অডিশন। প্রতিযোগিতার বিষয় থাকছে— ভাদু, টুসু, মনসা মঙ্গলের উপর গান ও নৃত্য, বাউল গান, আদিবাসী নৃত্য, রণ-পা, ঝুমুর, পুতুলনাচ, আঞ্চলিক কবিতা, বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত, আধুনিক গান। নৃত্যের ক্ষেত্রে ধ্রুপদ, গৌড়ীয়, শাস্ত্রীয়, আধুনিক নৃত্য। নাটক, যন্ত্রসঙ্গীত, ম্যাজিক শো— এই রকম তেরোটি বিষয়ে বয়সভিত্তিক, দলভিত্তিক, সময়ভিত্তিক প্রতিযোগিতাগুলি হবে পোড়ামাটির হাটে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীরা বিষ্ণুপুর মেলায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। অন্যথায় থাকবে না অনুষ্ঠান পরিবেশনের সুযোগ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতাগুলি বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির হাটে নভেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে প্রতি শনিবার চলবে। ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে অডিশন। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘সময় এবং টাকা বাঁচানো এবং সেরা শিল্পীরাই যাতে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে বিষ্ণুপুর উৎসবের মান বৃদ্ধি করেন, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন।’’

বিষ্ণুপুরের নাট্যশিল্পী সমীরণ চক্রবর্তী, বাচিক শিল্পী অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়, নৃত্য শিল্পী মল্লিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাধু উদ্যোগ। আশা করব, এ বার মেলায় কারা, কখন, কোন মঞ্চে অনুষ্ঠান করবে, সে ব্যাপারে কেউ খবরদারি করতে পারবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cultural Fair Artist Audition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE