Advertisement
E-Paper

গ্রামে শিক্ষার আলো, তবু কেন ডাইন প্রথা

বৃহস্পতিবার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ছ’জনের প্রতিনিধি দল। সদস্যেরা গ্রামের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:০০
প্রচার: ফন্দি সর্দারের বাড়িতে বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিদল। নিজস্ব চিত্র

প্রচার: ফন্দি সর্দারের বাড়িতে বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিদল। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে ঢুকলেই যে বাড়িগুলিতে চোখে পড়ে ‘ডিশ কানেকশন’, সাইকেলে কিংবা পায়ে হেঁটে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ছবি— সেই গ্রামেই কি না ঘটে গেল ডাইন অপবাদে অত্যাচার! বুধবার পাড়ুইয়ের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে বৃদ্ধের দু’হাতের দশটি আঙুলই কাটার ঘটনা চারিদিকে ছড়াতে এ ভাবেই নিজেদের বিস্ময় জানিয়েছেন আশাপাশের গ্রামের মানুষেরা। বৃহস্পতিবার দিনভর গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, রাধাকৃষ্ণপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, পাকা রাস্তা আছে, টিউবওয়েল আছে। আছে ফোর-জি সংযোগযুক্ত মোবাইলও। এত কিছুর পরেও থেকে গিয়েছে অন্ধবিশ্বাস। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানাচ্ছে, তার ফলেই ঘটে গিয়েছে এমন নির্মম ঘটনা।

বৃহস্পতিবার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ছ’জনের প্রতিনিধি দল। সদস্যেরা গ্রামের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন। বিজ্ঞান মঞ্চের বীরভূম জেলা শাখার সহ সম্পাদক দেবাশিস পাল বলেন, ‘‘সব শুনে মনে হল গ্রামবাসীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কার জমে রয়েছে। বরং ফন্দি সর্দারের পরিবারের মানুষরাই এ সবে খুব একটা বিশ্বাসী নয়।’’ তবে কী চিরাচরিত সংস্কার থেকে বেরোতে চাওয়াতেই অবস্থা হল ফন্দি সর্দারের? উঠছে প্রশ্ন। ফন্দি সর্দারের বাড়িতে দীর্ঘ দিন কালীপুজোর চল রয়েছে। ফি বছরের ফাল্গুন মাসে পুজো হয়। সেই পুজো নিয়েই যদি এত সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে আগেই হল না কেন? তা হলে কী এর পিছনে এক বা একাধিক লোকের স্বার্থ রয়েছে?

পুলিশ জানিয়েছে, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছ’জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের ছ’জনকে সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট প্রকাশচন্দ্র বর্মনের এজলাসে হাজির করানো হয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ফন্দির ছেলে হরিচন্দ্র সর্দার সহ অভিযুক্ত ছবিলাল সর্দার, বলাই সর্দার ও রবি সর্দারের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি দুই অভিযুক্ত যতন ও হেমন্ত সর্দারের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ফন্দির ছেলে এবং বাকিদের জেরা করে ঘটনার সত্যতা জানার চেষ্টা হবে।

এ দিকে, এত দিন যাঁরা কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে প্রয়াসী হয়েছিলেন এই ঘটনা শুনে মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। বিশ্বভারতীর জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের অধীনে বর্তমানে ১০৬টি গ্রাম রয়েছে। পুরনো ৫০টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ১০টি গ্রাম আদিবাসী প্রভাবিত। রাধাকৃষ্ণপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতেরই অন্তর্গত গ্রাম শ্রীচন্দ্রপুর। এটিও একটি আদিবাসী প্রধান অধিগৃহীত গ্রাম। কিন্তু, বিশ্বভারতীর লাগাতার সচেতনতা শিবিরের ফলে এই জাতীয় কোনও ঘটনা এখনও সেখানে ঘটেনি। জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পালের কথায়, ‘‘আমরা নতুন যে গ্রামগুলি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছি সেখানেও প্রাথমিক স্তরে কুসংস্কারমুক্ত করার চলছে। এই গ্রামের ঘটনা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।’’

জেলায় ডাইনি সন্দেহে নির্যাতন নতুন কিছু নয়। তবে এ বারের ঘটনার মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে অন্যগুলিকে। গত বছরের ডিসেম্বরে শান্তিনিকেতন থানার পিয়ার্সন পল্লিতে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয় এক আদিবাসী পরিবারকে। ইট, বাঁশ দিয়ে মারধর করার পর তাঁদের পুকুরের জলে ডুবিয়ে রেখে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পড়শিদের বিরুদ্ধে। রাধাকৃষ্ণপুরে সন্দেহের কারণ হিসেবে প্রতিবেশীরা জানান, কিছু দিন আগে এক শিশুর অকালমৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর কারণ ছিল নাকি ওই পরিবার। বিজ্ঞান মঞ্চের মতে, এমনই নানা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে নৃশংসতা বাড়ছে। লাগাতার সচেতনতা শিবিরের মধ্যে দিয়েই এই ধরনের ঘটনায় রাশ টানা যাবে বলেই মনে করছেন সকলে।

Science Awareness Campaign Witch Ritual
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy