Advertisement
E-Paper

নির্দেশ ঘিরে টানাপড়েন, ক্ষুব্ধ সব পক্ষ

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত মনোনয়ন জমার শেষ দিন নির্ধারিত ছিল। রাতের দিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আসে মঙ্গলবার পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া যাবে।

অর্ঘ্য ঘোষ ও অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ঘিরে হয়রানি হলেন বিরোধীরা। কোথাও আবার সেই সুরে গলা মেলালেন শাসকদলের নেতা, কর্মী থেকে সমর্থকরাও। প্রশাসনের একাংশও ক্ষোভ গোপন করলেন না। হাঁসন কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ আবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত এবং শাসকদলের বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্র ধ্বংস’-এর অভিযোগ তুলে মনোনয়নের কাগজপত্র পুড়িয়ে দিলেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত মনোনয়ন জমার শেষ দিন নির্ধারিত ছিল। রাতের দিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আসে মঙ্গলবার পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া যাবে। সেই নির্দেশের প্রতিলিপিও পৌঁছে যায় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের কাছে। নতুন করে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। বিরোধী দলগুলি শেষ চেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন জমার মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলে। অন্য দিকে মনোনয়পত্র জমা দেওয়া আটকাতে শাসকদলও ফের মাঠে নামার পরিকল্পনা নেয় বলে অভিযোগ।

সেই মতো এ দিন সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় কার্যালয়ে বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থীরা জমায়েত হতে শুরু করেন। তারই মধ্যে আবার খবর পৌঁছয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন। তার পরেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই সব প্রার্থীরা। ওই ঘটনায় বিরোধী দলগুলির মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা একসুরে বলছেন, ‘‘এই ধরণের তামাশার কী মানে ছিল বুঝি না। এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয় রাজ্যের নির্বাচন কমিশনও শাসকদলের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।’’

শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকাতে নানুর, লাভপুর, আমোদপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় ২ মে থেকে সোমবার পর্যন্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এমনকি মহকুমাশাসকের দফতরে বিরোধী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নজরদারি চালানোরও অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবারও সকাল থেকে লাভপুর, নানুর, আমোদপুরে সাঁইথিয়া বিডিও অফিসের সামনে শাসকদলের ব্যাপক কর্মী সমাবেশ শুরু হয়। খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন করা হয়। নির্দেশ বাতিলের পরে ওই কর্মী-সমর্থকেরা বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন। লাভপুরের দরবারপুরের এক কর্মী বলছেন, ‘‘আরও একটা দিন উৎসবের মেজাজে কাটল।’’

এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়তে হয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনের কর্মীদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই বিডিও বলছেন, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। তার উপরে ওই নির্দেশ জারি এবং প্রত্যাহার করাকে কেন্দ্র করে জবাবদিহি করতে করতে হয়রান হয়ে পড়েছি।’’ তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য এবং লাভপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সহ সভাপতি আব্দুল মান্নান মনে করছেন, ‘‘যারা এত দিনে পারেনি, তারা এ দিন মনোনয়ন জমা করতে পারত বলে মনে হয় না। নির্বাচন কমিশনের ওই নির্দেশ বেআইনি ছিল বলেই প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। এতে অবশ্য আমরাও হয়রানির শিকার হলাম।’’

একই দাপট দেখা গিয়েছে রামপুরহাট থেকে শুরু করে বোলপুরেও। হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টনের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার সকালে রামপুরহাট ২ এবং নলহাটি ২ এই দুই পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় ২৫০ জন প্রার্থী, তাঁদের দু’জন করে প্রস্তাবক এবং সাক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে রামপুরহাট ভাঁড়শালামোড়ের কাছে পৌঁছই। কিন্তু, মনোনয়ন এ দিনও জমা করতে পারলাম না!’’ সেই ক্ষোভ থেকেই মনোনয়নের কাগজ পোড়ানো বলে জানিয়েছেন মিল্টন। বামেদের তরফেও রামপুরহাট ১ এবং রামপুরহাট ২ ব্লক মনোনয়ন জমার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তার জন্যে আত্মীয়ের বাড়িতেও চলে এসেছিলেন কেউ কেউ। দিনের শেষে সবই বিফলে যায়।

বিজেপি সূত্রের খবর, সোমবার নলহাটিতে বিজেপি এবং পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত রাজ্য যুব মোর্চার সম্পাদক ধ্রুব সাহা সহ সাত বিজেপি প্রার্থীকে আদালতের নির্দেশে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও প্রস্তাবকের অভাবে তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের নির্দেশে বীরভূম জেলা পরিষদে প্রার্থী বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা বিজেপি। তার প্রস্তুতিও শেষে মাঠে মারা যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, মনোনয়ন হবে বুঝে এ দিনও বাধা দিতে তৈরি ছিল তৃণমূলের বাহিনী। তারাপীঠ থানার বুধিগ্রাম অঞ্চল সহ মাড়গ্রাম থানার কালুহার তৃণমূল কর্মীরা বাসে করে লাঠি, রড রামপুরহাট শহরে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ। জমায়েত দেখা গিয়েছে রামপুরহাট শহরের কামারপট্টি মোড় থেকে দেশবন্ধু রোড, পাঁচমাথা মোড় থেকে এসডিও অফিসের সামনেও।

West Bengal Panchayet election 2018 Panchayet election Election comion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy