Advertisement
E-Paper

নেতা গোঁজ, হুঁশিয়ারি অন্য নেতার

আদালতের নির্দেশে বাড়তি এক দিন মনোনয়নের সুযোগ মিলতেই এই জেলায় তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন দিলেন অনেকে। তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে, আখেরে যে তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতে দলেরই ক্ষতি হবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক নেতাই।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১১:২৩

গোঁজ কাঁটা কী ভাবে তোলা যাবে, তা নিয়ে কিছুতেই দুর্ভাবনা কাটছে না পুরুলিয়ার তৃণমূল শিবিরের।

আদালতের নির্দেশে বাড়তি এক দিন মনোনয়নের সুযোগ মিলতেই এই জেলায় তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন দিলেন অনেকে। তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে, আখেরে যে তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতে দলেরই ক্ষতি হবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক নেতাই।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে ওই অতিরিক্ত দিন সোমবারই শাসকদলের হয়ে ৫২ জন মনোনয়ন জমা করেছেন। তাঁদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৯ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৬ জন এবং জেলা পরিষদে সাত জন মনোনয়ন দেন। এই তথ্য যোগ করে জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৪৪টি আসনে তৃণমূলের হয়ে ২৪৫৬ জন, পঞ্চায়েত সমিতির ৪৪৬ আসনে ৭০৮ জন এবং জেলা পরিষদের ৩৮ আসনে ৮৪ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, দলের প্রতীক না পেয়েও যাঁরা মনোনয়ন করেছেন, তাঁরা নাম প্রত্যাহার করে নেবেন। যদিও জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো গোঁজ প্রার্থীদের আগেই নাম প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। তারপরেও বাড়তি দিনে এত মনোনয়ন জমা পড়ে যাওয়ায়, কতটা গোঁজ কাঁটা শেষ পর্যন্ত তোলা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান দলীয় নেতৃত্বের অনেকে। এক জেলা নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘এ বার যা পরিস্থিতি, তাতে বেশ কয়েকটি জায়গা নিয়ে আমরা আক্ষরিক অর্থেই দিশেহারা অবস্থায়।’’

হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১২ নম্বর আসন নিয়ে দলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। দল সূত্রে খবর, ওই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন হুড়ার লধুড়কা অঞ্চল সভাপতি কার্তিক মুখোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশে মনোনয়নের একটি দিন বাড়তেই স্থানীয় বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার হস্তক্ষেপে লধুড়কার যুব সভাপতির স্ত্রীকে ওই আসনে প্রার্থী করা হয়। এরপরেই চটে গিয়ে চার নেতা-কর্মীকে সাসপেন্ড করেন বলে দাবি করেছেন কার্তিকবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যিনি আমার প্রস্তাবক ছিলেন, তিনি এবং দলেরই অন্য তিন জন আমার আসনেই অন্য এক জনকে প্রার্থী করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাই দল বিরোধী কাজের অভিযোগেই ওই চার জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’

আবার হুড়ার একটি জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার ছেলে তথা কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। ওই আসনেই ইতিপূর্বে মনোনয়ন দিয়েছেন হুড়া ব্লক সভাপতি শ্যামনারায়ণ মাহাতো। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন কার্তিকবাবু। ঘটনাচক্রে তার পরেই কার্তিকবাবুর আসনে যুব নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়।

বিধায়ক স্বপনবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কার্তিকবাবু কোনও কর্মীকে বহিষ্কার বা সাসপেন্ড করার কে? কার্তিকবাবুর বিরুদ্ধেই দলবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছিল। তাই ওই আসনে অন্য এক জনকে প্রার্থী করেছি। তিনি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে যান, তাহলে নির্দল হয়েই লড়তে হবে। কারণ তাঁকে দলের প্রতীক দেওয়া হবে না। উল্টে দল তাঁকেই সাসপেন্ড বা বহিষ্কার করবে।’’ যদিও কার্তিকবাবু বলছেন, ‘‘তিনি লড়াইয়ে থাকছেন।’’

একই সমস্যা বাঘমুণ্ডির ১৫ নম্বর জেলা পরিষদ আসনেও। এই আসনে দলের প্রার্থী বাঘমুণ্ডি ব্লকের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক আশুতোষ মাহাতো। ২৩ এপ্রিল এই আসনেই মনোনয়ন দাখিল করেন দলের বাঘমুণ্ডি ব্লকের যুব সভাপতি শশীপ্রসাদ মাহাতো। তাঁর দাবি, ‘‘কর্মীরা অনেক আগে থেকেই আমাকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অপেক্ষা করেও জেলা নেতৃত্বের তরফে কিছু জানতে না পেরে আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি। অন্য কাউকে দল প্রার্থী করেছে বলে কেউ জানাননি। মনোনয়ন তোলার প্রশ্ন নেই।’’ আর আশুতোষবাবু বলছেন, ‘‘শুনেছি পরে এই আসনে দলেরই এক জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।’’

মানবাজার ২ ব্লকের একটি আসনেও দলের জেলা মহিলা সভানেত্রী নিয়তি মাহাতোর আসনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অঞ্জলি মাহাতো নামে অন্য এক প্রার্থী। পুরুলিয়া ২ ব্লকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই জেলা নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এই ব্লকের একটি আসনে দলের হয়েই মনোনয়ন দিয়েছেন সাত জন! দল যাঁকে প্রার্থী করেছেন, তিনি ওই ব্লকের বাসিন্দা হলেও ওই আসন এলাকার নয়— এমনই অভিযোগ তুলে অন্যরাও মনোনয়ন দিয়েছেন। আরও বেশ কয়েকটি আসনে এক নেতা অন্যজনের মনোনয়ন মেনে নিতে পারছেন না বলে কর্মীদের মধ্যেই চর্চা হচ্ছে। তাঁরা ভোটে দলের ওই প্রার্থীর হয়ে কতটা নামবে, তা নিয়েও সংশয়ের মেঘ কাটছে না।

দলের এক জেলা নেতা কবুল করছেন, ‘‘এই বিপুল পরিমাণ গোঁজদের কে মনোনয়ন তোলাবেন কে জানে?’’ তবে জেলা কমিটির অন্য এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘ডানপন্থী রাজনীতির এটাই সংস্কৃতি। দিদি এক বার এসে গোঁজদের সরতে বললেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি বলছেন, ‘‘দলের অনুমোদন না থাকা লোকজনকে মনোনয়ন তুলতে বলা হয়েছে। তাঁরা তুলে নেবেন।’’ শেষ পর্যন্ত সবাই কি তুলবেন? তাঁর জবাব, ‘‘চেষ্টা চলছে।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC Group Clash Nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy