Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দ্বন্দ্ব কতটা গভীরে, দেখলেন রাজ্য নেতৃত্ব

দলের নয়া সাংগঠনিক বিন্যাস মেনে মণ্ডল সভাপতিদের নামই ঘোষণা করতে পারল না পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। নেপথ্যে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পুরুলিয়া জেলায় ৪১টি মণ্ডলের সভাপতিদের নাম ঘোষণা করার কথা ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

দলের নয়া সাংগঠনিক বিন্যাস মেনে মণ্ডল সভাপতিদের নামই ঘোষণা করতে পারল না পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। নেপথ্যে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পুরুলিয়া জেলায় ৪১টি মণ্ডলের সভাপতিদের নাম ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকে তুমুল ঝামেলার জেরে সব ভন্ডুল হওয়ার উপক্রম হয়। শেষ অবধি অবশ্য বৈঠক হয়েছে।

দলীয় দ্বন্দ্বের কারণেই গত এক বছরে জেলা বিজেপি সভাপতি পদে রদবদল বয়েছে দু’বার। দলের অন্দরে দুই পক্ষের দ্বৈরথ নেমেছে প্রকাশ্য রাস্তায়। দলের জেলা কার্যালয়ের বাইরে পোড়ানো হয়েছে জেলা সভাপতির কুশপুতুলও। কোন্দলে রাশ টানতে হাল ধরতে হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এসে দু’পক্ষের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন। পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলে আর কোনও সমস্যা নেই। তবু কোন্দল থামার কোনও লক্ষণই যে নেই বিজেপিতে, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এ দিনের বৈঠকে।

সোমবার দলের জেলা কমিটির বৈঠক ছিল পুরুলিয়া শহরের একটি ধর্মশালায়। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এত দিন জেলায় দলের ২৪টি মণ্ডল (ব্লক) কাজ করত। নয়া সাংগঠনিক বিন্যাসে জেলা পরিষদ আসনের নিরিখে মণ্ডল গঠন করা হয়েছে। সেই সব মণ্ডলের সভাপতিদের নামই ঘোষণা করার কথা ছিল এ দিনের বৈঠকে। তার সঙ্গে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ও আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, জেলার পর্যবেক্ষক গোপাল সরকার, দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলার দায়িত্বে থাকা শ্যামাপদ মণ্ডল, দলের কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য বি পি সিংহদেও প্রমুখ।

সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই কয়েক জন বলতে থাকেন, আগে তাঁদের কথা শুনতে হবে। এই বলে তাঁরা বর্তমান জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে থাকেন। মৃত্যুঞ্জয় পান্ডে নামে এক নেতার অভিযোগ, দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রশিক্ষণ শিবিরের নামে বিভিন্ন মণ্ডল থেকে ভুল তথ্য রাজ্য কমিটির কাছে পেশ করা হয়েছে।

দলের আর এক নেতা সব্যসাচী আচার্যের বক্তব্য, আগের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিধানসভায় টিকিট পাইয়ে দেওয়ার জন্য আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এনেছিলেন দলেরই এক নেতা। জেলা সভাপতিকে সরতে হয়েছে। কিন্তু অর্থ দেওয়ার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে তিনি কিন্তু বহাল তবিয়তেই রয়ে গেলেন। এটা কেন হবে। বর্তমান জেলা সভাপতিকেও বদলানোর দাবি তোলেন কিছু নেতা। অভিযোগের আঙুল ওঠে জেলা পর্যবেক্ষকের দিকেও। বৈঠকের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের নেতাদের একাংশ হলের মধ্যেই তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। কেউ চেয়ার তুলে নীচে আছড়ান। মঞ্চ থেকে রাজ্য নেতারা শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলেও কেউই সে কথা কানে না তোলেননি। বেশ কিছুক্ষণ বিশৃঙ্খলা চলার পরে শ্যামাপদবাবু বৈঠক শুরু করেন।

জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগরবাবুর অবশ্য দাবি, দলের কিছু লোক ঝামেলা করার অভিসন্ধি নিয়েই বৈঠকে এসেছিলেন। যাঁরা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছিলেন, তাঁদের বৈঠকে থাকারই কথা নয়। ডাক না পেয়েও তাঁরা হাজির হয়েছিলেন। রাজ্য নেতৃত্ব তবু তাঁদের বৈঠকে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা ঘটনা রাজ্য নেতৃত্বের সামনে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরাই বলবেন। তবে আমি কী ভাবে দল চালাচ্ছি, তা জ্য নেতৃত্বের গোচরে রয়েছে।’’

জেলার দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষক গোপাল সরকার বলেন, ‘‘আমাদের দল নীতির উপরে দাঁড়িয়ে কাজ করে, কোনও নেতার মুখ চেয়ে নয়। ফলে কোন বৈঠকে হাজির হয়ে কে কী বলল, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলের হয়ে কে কী কাজ করছে।’’

দলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘দলের মধ্যে মত প্রকাশের অধিকার সকলেরই থাকে। সকলকে মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia BJP Inter Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE