Advertisement
০৫ মে ২০২৪
জেলা সভাপতির পদত্যাগে ক্ষুব্ধ অনুগামীরা

এগিয়ে শুরু করেও চাপে সাঁইথিয়ার বিজেপি কর্মীরা

গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের হিসেবে শহরের ১৬টির মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডে তারাই বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অথচ শহরে দলের একমাত্র কাউন্সিলর কোথা থেকে জেতেন, সেটাই ঠিক করে জানেন না বিজেপি-র সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আহ্বায়ক!

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:০৯
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের হিসেবে শহরের ১৬টির মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডে তারাই বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অথচ শহরে দলের একমাত্র কাউন্সিলর কোথা থেকে জেতেন, সেটাই ঠিক করে জানেন না বিজেপি-র সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আহ্বায়ক!

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আচমকা চাপে পড়ে গিয়েছে সাঁইথিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। অথচ লোকসভা ভোটের ফলে উজ্জ্বীবিত শহরের বিজেপি কর্মীরা প্রথম বারের জন্য সাঁইথিয়া দখলের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু, জেলা সভাপতির পদ থেকে দুধকুমার মণ্ডলের হঠাত্‌ সরে যাওয়ায় দলের নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পুরসভায় বোর্ড গড়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে না তো?

এমন সম্ভাবনার কথা অবশ্য প্রকাশ্যে উড়িয়ে দিচ্ছে সাঁইথিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। সাঁইথিয়ায় নির্বাচনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জয়দেব পাল বলছেন, “আমাদের দলের কর্মীরাই আসল। তা ছাড়া দুধকুমারবাবু তো দলেই রয়েছেন। লোকসভা ভোটের মতোই এই শহরের মানুষ পুরভোটেও আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। ভোটে জিতে আমরাই সাঁইথিয়ার উন্নয়ন করব।” এই দাবির সঙ্গে বাস্তব ছবির মিল কতটুকু, তা আর কয়েক দিনের মধ্যেই জানা যাবে। তবে, বিজেপি-র অন্দরে ডামাডোলের সুযোগ নিতে ছাড়ছে না পিছিয়ে থেকে ময়দানে নামা তৃণমূল। দলের একমাত্র কাউন্সিলরের সম্বন্ধে তথ্য দিতে গিয়ে বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা যখন অন্য কর্মীদের সাহায্য নিচ্ছেন, তখন সাঁইথিয়া পুরভোট নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং এলাকার দায়িত্বে থাকা লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের। মঙ্গলবারই কর্মীদের নিয়ে সাঁইথিয়ায় দলীয় কার্যালয়ে বসে কীভাবে ১৬-০ ব্যবধানে জেতা যায়, তার রণনীতি ঠিক করতে বসেছিলেন ওই দুই নেতা। পরে অনুব্রত দাবি করেন, “লোকসভার সঙ্গে পুরভোটকে এক সূত্রে বাঁধবেন না। সারা বছর তৃণমূল মানুষের সঙ্গে ছিল। তাই বামফ্রন্ট বা বিজেপি কোনও ফ্যাক্টরই নয়। আমরা সব আসনেই জিতব।”

ঘটনা হল, সাঁইথিয়া পুরসভায় এর আগে যত বারই ভোট হয়েছে, কংগ্রেস দখল করেছে। গত ভোটেও সেই ফল বদলায়নি। তবে, বছরখানেক আগে জয়ী কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একটা বড় অংশ দল পাল্টে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরসভা থেকে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যূত হয়। এলাকায় দলের বড় নেতারা এবং কর্মীদের একটা বড় অংশ শাসকদলে ভিড়ে যাওয়ায় সাঁইথিয়ায় আগের সেই কংগ্রেসের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া দায়। এ দিকে, গত পুরভোটে শহরের মাত্র একটি ওয়ার্ডেই তৃণমূল জিততে পেরেছিল। যদিও দল বদলের হিসেবে বিদায়ী বোর্ডে তাদের কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪। এরই মাঝে হয়ে যায় লোকসভা ভোট। যার ফলাফলে দেখা যায় শাসকদল মাত্র দু’টি ওয়ার্ডেই জয়ী হতে পেরেছে। ওই ফলাফলই পুরবোর্ড দখলের ব্যাপারে আশা জাগিয়েছিল শহরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু, দলের দাপুটে জেলা সভাপতি দুধকুমারের পদত্যাগে বর্তমানে তাঁদের সেই স্বপ্ন খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে।

অবস্থাটা কেমন, তার আঁচ মঙ্গলবারই মিলেছে। সাঁইথিয়ায় বিজেপি-র তিন বারের কাউন্সিলর কাশীনাথ মণ্ডল। সম্ভাব্য পুরপ্রধান হিসেবে দল কাশীনাথবাবুকেই তুলে ধরতে চায় বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু, মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁর মনোনয়নপত্রই দাখিল করতে পারেনি বিজেপি! দলের একটি সূত্রের খবর, ৪ না ১০ এই দুই ওয়ার্ডের কোনটিতে তিনি দাঁড়াবেন, নাকি দু’টিতেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের ২৪ ঘণ্টা আগেও দলীয় নেতৃত্ব ঠিক করে উঠতে পারেননি। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন কাশীনাথবাবু শেষ পর্যন্ত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। গত দু’দিনে দলের হয়ে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমাও করেছেন।

এ দিকে, ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জন সাহাকে জেলা আহ্বায়ক করে পুরভোট সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। দলে দুধকুমার-বিরোধী বলে পরিচিত অর্জুনবাবুর ওই দায়িত্ব পাওয়ায় ক্ষুব্ধ সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতির অনুগামীরা। তাঁদের অনেকেই অর্জুনবাবুকে সহায়তা করার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্তও। দুধকুমারের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামী যেমন বলছেন, “দুধদার নেতৃত্বে থাকলে আমরা যে ভাবে ভোটে ঝাঁপাতে পারতাম, তা কি নতুন নেতার নেতৃত্বে সম্ভব?” মঙ্গলবার সাঁইথিয়ায় দলীয় কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ দেখতে পৌঁছেছিলেন অর্জুনবাবু। দুধকুমারের পদত্যাগ কি পুরভোটে প্রভাব ফেলবে? অর্জুনবাবুর জবাব, “এটা সত্যিই যে দুধকুমারবাবু হঠাত্‌ পদত্যাগ করায় সাঁইথিয়ায় অনেকেই ভোটে দাঁড়াতে চাননি। তবে, ওই সমস্যা মিটে গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে হতাশা আছে, তা-ও কয়েক দিনের মধ্যেই কেটে যাবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “শহরের মানুষ অনেক স্বচেতন। বিজেপি সর্বভারতীয় বড় দল। একটু আধটু মনোমালিন্য হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু, দিনের শেষে দুধকুমারবাবু দলে আছেন, তিনি দলের সম্পদ। সাঁইথিয়ার পুরভোটে নেত্বৃত্বও দেবেন। তাই কোনও সমস্যা হবে না।”

সত্যিই কি? ঘটনা হল, দলের সম্ভাব্য পুরপ্রধানের পদপ্রার্থী কাশীনাথবাবু কত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন, তা-ও অন্য কর্মীদের কাছ থেকে জেনেই বলতে হচ্ছে বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ককে। প্রশ্নটা তেমন কিছু নয়, কিন্তু শহরে বিজেপি-র একমাত্র তিন তিন বারের কাউন্সিলর তথা দীর্ঘ দিনের পার্টিকর্মী কাশীনাথবাবু কোন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন, তা বলতে না পারাটা অস্বস্তিকর বলেই মনে করেন দলের নিচুতলার কর্মীরা। তবে, এই সব অস্বস্তিকর প্রসঙ্গকে উড়িয়ে দিয়ে দুধকুমার নিজে বলছেন, “ব্যক্তি নয়, দলই আসল। সেই দলের জন্য আমরা প্রত্যেকে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। শুধু সাঁইথিয়া কেন, এ বার জেলার চারটি পুরসভাই আমরা তৃণমূল-মুক্ত করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE