Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Raghunathpur

বকেয়া বেতন, টাওয়ারে দেহ

তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও মৃতের পরিজনদের একাংশের দাবি, গত আট মাস বেতন পাননি ইসলাম। তারই জেরেই মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

এই মোবাইল টাওয়ারেই কর্মরত ছিলেন ইসলাম।ইসলাম আনসারি।(ইনসেটে) ছবি: সঙ্গীত নাগ

এই মোবাইল টাওয়ারেই কর্মরত ছিলেন ইসলাম।ইসলাম আনসারি।(ইনসেটে) ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

মোবাইলের টাওয়ার থেকে উদ্ধার হল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীর দেহ। মৃতের নাম ইসলাম আনসারি (২৬)। বাড়ি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার গোপীনাথপুর গ্রামে। যুব তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে তিনি এলাকায় পরিচিত। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় লোকজন গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে একটি মোবাইল টাওয়ারে দেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইসলাম আনসারি নামের ওই যুবকের দেহ উদ্ধারের পরে, রঘুনাথপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ইসলাম আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসলাম একটি বেসরকারি সংস্থার অধীনে ওই মোবাইল টাওয়ার দেখাশোনার কাজ করতেন। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও মৃতের পরিজনদের একাংশের দাবি, গত আট মাস বেতন পাননি ইসলাম। তারই জেরেই মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। শুধু ইসলাম নন, মোবাইল টাওয়ারে কাজ করা কর্মীদের সংগঠনের পুরুলিয়ার সম্পাদক সনৎ মাহাতোর অভিযোগ, ওই বেসরকারি সংস্থার অধীনে পুরুলিয়ার বিভিন্ন মোবাইল টাওয়ারে কাজ করা মোট ২২ জন গত আট মাস বেতন পাননি। তিনি বলেন, ‘‘সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনায় স্থির হয়েছিল, পুজোর আগেই বকেয়া বেতন ও বোনাস মিটিয়ে দেবেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনও টাকাই দেওয়া হয়নি, মোবাইল টাওয়ারে কাজ করে প্রতি কর্মীই চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন।’’

ইসলামের টাকার প্রয়োজন ছিল বলে জানাচ্ছেন রঘুনাথপুর এলাকার যুব তৃণূলের নেতা সাদ্দাম আনসারি। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে ইসলাম ফোন করে হাজার পাঁচেক টাকা চয়েছিল। আমার কাছে সে সময়ে অত টাকা ছিল না। বুধবার সকালে দেব বলেছিলাম। টাকা না পেলে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল ইসলাম।” তৃণমূলের স্থানীয় নেতা হাজারি বাউড়ি বলেন, ‘‘ইসলাম আমাদের দলের অত্যন্ত সক্রিয় কর্মী ছিলেন। গত আট মাস বেতন বকেয়া থাকায় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিলেন। বেতন না পওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।” ইসলামের সঙ্গে ওই মোবাইল টাওয়ার দেখাশোনার কাজ করছিলেন তাঁর আত্মীয় রুম আনসারি। তিনি বলেন, ‘‘টানা আট মাস বেতন না পয়ে আমরা সবাই আর্থিক দিক দিয়ে চরম সঙ্কটে আছি। ইসলামের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বিয়ে ছিল বলে ওর টাকার প্রয়োজন ছিল বেশি।’’

তবে এ দিন বহু চেষ্টা করেও ওই বেসরকারি সংস্থার প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি। এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি শুনে পরে বক্তব্য জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন। তার পরে আর অনেক বার ফোন করা হলেও ধরেননি। জবাব মেলেনি মেসেজেরও। গোপীনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামের বাড়ি ঘিরে পড়শিদের ভিড়। মৃতের বাবা উমের আলি আনসারি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে চতুর্থ ইলসাম। ভাই হাসমত আনসারি বলেন, ‘‘দাদার স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বকেয়া থাকায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathpur Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE