E-Paper

মাঠে বইয়ের মেলা, তালাবন্ধ মেলা বই

কর্মী অভাবে জেলার গ্রন্থাগারগুলি ধুঁকছে। জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১২৪টি সরকারি গ্রন্থাগারে যেখানে ২৭৬ জন কর্মী দরকার, সেখানে রয়েছেন মাত্র ৭৫ জন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫০
রামপুরহাট, সব্যসাচী ইসলাম। বইমেলায় মাড়গ্রাম থানার একটা স্কুলের পড়ুয়ারা বই কিনে মেলার মাঠে নিজেদের মধ্যে আলোচনা।

রামপুরহাট, সব্যসাচী ইসলাম। বইমেলায় মাড়গ্রাম থানার একটা স্কুলের পড়ুয়ারা বই কিনে মেলার মাঠে নিজেদের মধ্যে আলোচনা।

জেলা বইমেলা রামপুরহাটে শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। বইমেলায় বিভিন্ন গ্রন্থাগারগুলির জন্য বই কিনতে সরকার জেলা, শহর এবং গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে বিভিন্ন ভাবে আর্থিক সাহায্য করছে। অথচ কর্মীর অভাবেই জেলার বেশ কিছু গ্রন্থাগার সম্পূর্ণ বন্ধ। সেখানে ধুলো পড়ছে জমে থাকা বইয়ের সারিতে।গ্রন্থাগার বাঁচাতে কেন সরকার কর্মী নিয়োগ করবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বইপ্রেমীরা।

একটা সময় গ্রন্থাগারে খবরের কাগজ দেখার জন্য ভিড় করতেন এলাকার বাসিন্দারা। সেখানে এখন ধুলো ঝাড়ার লোক নেই। ভবনের তালা বন্ধ থাকায় এলাকার বাসিন্দারাও সেখানে ভিড় করেন না। এমনই অবস্থা বীরভূম জেলার সরকারি গ্রন্থাগারগুলির। কোথাও দীর্ঘদিন ধরে তালা খোলে না। কোথাও আবার মাসে এক বা দু’দিন খুললেও পাঠকদের দেখা মেলেনা।

কর্মী অভাবে জেলার গ্রন্থাগারগুলি ধুঁকছে। জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১২৪টি সরকারি গ্রন্থাগারে যেখানে ২৭৬ জন কর্মী দরকার, সেখানে রয়েছেন মাত্র ৭৫ জন। তার মধ্যে আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ৪৩ জন। বাকি ৩২ জন গ্রন্থাগারিক। সূত্রের খবর, জেলায় বর্তমানে ২৫টি গ্রন্থাগার সম্পূর্ণ বন্ধ। জেলার অধিকাংশ গ্রন্থাগার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। বেশির ভাগ গ্রন্থাগারিককে দুটি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামাল দিতে হচ্ছে।

সম্পূর্ণ বন্ধ গ্রন্থাগারগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন বর্তমানে ওই গ্রন্থাগারগুলির পরিচালন কমিটি দায়িত্ব সামাল দিচ্ছে। সেটাও অনিয়মিত। এর ফলে একটা গ্রন্থাগার নিয়মিত খোলা থাকলে একজন গ্রন্থাগারিক গ্রন্থাগারে রাখা বইয়ের ধুলো ঝেড়ে বই রাখার আলমারি পরিস্কার করে পোঁকায় কাটা থেকে যত্ন করে তুলে রাখেন সেই যত্ন বন্ধ গ্রন্থাগারগুলিতে হয় না। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে অযন্তে নষ্ট হচ্ছে দামী দামী বই।

জেলা গ্রন্থাগার দফতরের আধিকারিক সুদীপ্ত বিশ্বাস জানান, জেলাতে এখন ২৫ টি গ্রন্থাগার কর্মী অভাবে বন্ধ আছে। ওই সমস্ত গ্রন্থাগারগুলি পরিচাললন কমিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে যেখানে যেখানে পরিচালন কমিটির নিজস্ব উদ্যোগ বেশি সেখানে গ্রন্থাগার গুলি দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে বসে গ্রন্থাগারগুলি খুলে থাকেন। সুদীপ্ত বিশ্বাসের দাবি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন গ্র ন্থাগার গুলিতে যারা দুটি গ্রন্থাগারের দায়িত্বে আছেন তাদের বক্তব্য কর্মী অভাবে কোনও গ্রন্থাগার তিন বছর যাবত বন্ধ। কোথাও আবার দুবছর একবছর ছমাস যাবত বন্ধ। অধিকাংশ গ্রন্থাগারিকদের দুটি করে গ্রন্থাগার সামাল দিতে হচ্ছে। এর ফলে গ্রন্থাগারিকদেরও হয়রান হতে হচ্ছে। এই অবস্থায় অধিকাংশ গ্রন্থাগারিকদের বক্তবা এই ভাবে চলতে পারে না।

আবার যেখানে এক বা দুদিন গ্র ন্থাগার খোলে সেখানকার পাঠকরা কবে কখন কোন সময় গ্রন্থাগার খোলা থাকছে জানতেই পারেন না। মাড়গ্রামের বাসিন্দা অ্যালম শেখ জানান, আগে গ্রন্থাগার খোলা থাকলে এলাকার বাসিন্দারা খবরের কাগজ থেকে বিভিন্ন রকম গল্পের বই, স্কুল কলেজের সহায়ক পাঠ্য বই স্থানীয় গ্রন্থাগার থেকে জোগাড় করত। এখন গ্রন্থাগার কবে কোন খোলা থাকে এলাকার বাসিন্দারা জানতেইপারেন না।

মুরারইয়ের বাসিন্দা স্থানীয় কবি নজরুল কলেজেরে শিক্ষক অর্নিবানজ্যোতি সিংহ জানান, মুরারইয়ের গ্রন্থাগার টি প্রায় একবছর যাবত বন্ধ। দেড়শো পাঠক ছিল। এখন গ্রন্থাগার বন্ধ থাকার ফলে অনেক বইপ্রেমী মানুষ গ্রন্থাগার থেকে বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

library Rampurhat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy