Advertisement
E-Paper

স্কুলে শৌচ বন্ধে ভরসা সিসিটিভি

বিষ্ণুপুরের কুসুমবনি যমুনাদাস খেমকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে গিয়েছে রেললাইন। তার ধার ঘেঁষে  বসতি। ঝুপড়ি বাড়ি রয়েছে।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২২
নিরাপত্তা: এ রকমের চারটি ক্যামেরা বসেছে বিষ্ণুপুরের স্কুলে। আরও চারটির জন্য তোড়জোড় চলছে। নিজস্ব চিত্র

নিরাপত্তা: এ রকমের চারটি ক্যামেরা বসেছে বিষ্ণুপুরের স্কুলে। আরও চারটির জন্য তোড়জোড় চলছে। নিজস্ব চিত্র

শৌচ থেকে স্কুল বাঁচাতে ভরসা সিসিটিভি।

বিষ্ণুপুরের কুসুমবনি যমুনাদাস খেমকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে গিয়েছে রেললাইন। তার ধার ঘেঁষে বসতি। ঝুপড়ি বাড়ি রয়েছে। নেই শৌচালয়। পরিনাম— স্কুলে নতুন আটটি ক্লাসঘর তৈরি হয়েছে, কিন্তু ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্কুলের মাঠ থাকতেও পড়ুয়াদের অন্য মাঠে অনুশীলন করাতে নিয়ে যেতে হয়। স্কুলের পাঁচিল কোনও বাধা নয়, বরং আব্রু।

এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য বসানো সিসি ক্যামেরা কাজে আসতে পারে বলে আশা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি অনেকটা জায়গা নিয়ে তৈরি। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবীপ্রসাদ মিশ্র জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চিন্তা ছিল। কিছু দিন আগেই রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে সুরক্ষা কমিটি গঠন করতে বলা হয়। ওই কমিটি তৈরির পাশাপাশি স্কুল উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় তিরিশ হাজার টাকা খরচ করে চারটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জানুয়ারিতে স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় আরও চারটি ক্যামেরা বসানো হবে।

প্রধানশিক্ষক প্রসেনজিৎ কুণ্ডু জানান, এখন পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৩২ জন আর ৭ জন প্যারাটিচার। তার পরেও প্রায় ছ’একর স্কুল চত্বরের সর্বত্র নজর রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। হামেশাই সাইকেলের ঘন্টি, সিটের ঢাকনা চুরি হচ্ছিল। দুষ্টুমি করে বন্ধুর সাইকেলের হাওয়া খুলে দেওয়া তো আছেই। কিন্তু সাইকেলের ঘন্টি রক্ষা করার চেয়েও স্কুল চত্বর নির্মল রাখার চ্যালেঞ্জটাই বড়।

কেমন? প্রসেনজিৎবাবু বলেন, ‘‘স্কুলের খেলার মাঠ তো বটেই, একেবারে স্কুল প্রাঙ্গণেই অনেকে শৌচ করে যান। আটটি নতুন ক্লাসঘর হয়েছে। কিন্তু এই উপদ্রবের ফলে সেগুলি ব্যবহারই করা যাচ্ছে না।’’ স্কুলে সদ্য শারীরশিক্ষা বিভাগ চালু হয়েছে। ওই বিভাগের শিক্ষক উত্তম মল্লিক বলেন, ‘‘নিজেদের বড় পাঁচিল ঘেরা মাঠ থাকতেও পড়ুয়াদের নিয়ে দূরে জঙ্গল ঘেরা কুসুমবনি মাঠে অনুশীলনের জন্য যেতে হয়। সিসি ক্যামেরা বসিয়ে যদি পরিস্থিতির বদল হয়, তাহলে পড়ুয়াদের আর চরকিপাক ঘুরতে হয় না।’’

কিন্তু পুর-এলাকায় পরিস্থিতি এমনটা কেন?

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তন্ময় ঘোষ জানাচ্ছেন, তুঁতবাড়ি ও নামোপাড়াোর অধিকাংশ বা়ড়িতেই শৌচালয় নেই। তিনি বলেন, ‘‘পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বাসিন্দাদেরও সচেতন করার চেষ্টা করছি।’’ তন্ময়বাবু জানান, নামোপাড়ায় অনেক মানুষ রেলের জায়গায় থাকেন। তবে তুঁতবাড়িতে সেই সমস্যা নেই। ওই এলাকায় হাউস ফর অল প্রকল্পে শৌচাগার-সমেত বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নামোপাড়ায় রেলের জায়গায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যত্র বাড়ি করে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অবশ্য সিসি ক্যামেরা বসায় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়েও বেশ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন অভিভাবকেরা। বিষ্ণুপুরের স্টেশন রোডের বাসিন্দা সুনীল বাগদি বলেন, ‘‘মেয়েটাকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। ক্যামেরা থাকলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।’’ মহকুমা সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (বিষ্ণুপুর) সঞ্জীব দাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খুব ভালো উদ্যোগ। তবে শুধু বসানো নয়, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মনিটর করতে হবে। দিন পনেরো পরে আমি নিজেই গিয়ে দেখে আসব সব কেমন চলছে।’’

এই আয়োজনের পরে আসল চিন্তা কতটা মেটে, এখন সে দিকেই তাকিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামোপাড়ার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘যাঁরা সাত সকালে স্কুলের পাঁচিল ডিঙোন, তাঁরা আসলে কী ভাবে বেঁচে থাকেন সেটার দিকে একটু নজর দিলে ভাল হয়। তার জন্য সিসি ক্যামেরারও দরকার হবে না।’’

CCTV SChool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy