Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্যের টানে পুতুল গড়েন শঙ্কর

ষাটোর্ধ্ব শঙ্কর সূত্রধরের মতোই ঝালদার জেলে পাড়ার মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। দম ফেলারও ফুরসত নেই যেন। তাঁরা সবাই রথের মেলায় মাটির পুতুলের দোকান দেন। মূলত প্রতিমা গড়েই সংসার চলে তাঁর। মাঝে মাঝে অন্য মূর্তি গড়ার বরাতও মেলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৪:১৮
উৎসবের মেজাজ: ঝালদায় রথের মেলার জন্য মাটির পুতুল তৈরিতে মগ্ন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র

উৎসবের মেজাজ: ঝালদায় রথের মেলার জন্য মাটির পুতুল তৈরিতে মগ্ন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র

ক’দিন ধরেই আকাশের মেজাজ ভাল নয়। নরম মাটির পুতুল শুকোতে অনেকটাই সময় লেগে গিয়েছে। ঝালদার জেলেপাড়ার বাড়ির দাওয়ায় বসে মাটির তৈরি মোটু-পাতলুর গায়ে শেষ তুলির টান দিচ্ছিল দুই খুদে শিল্পী। পুতুল গড়া এই তাদের কয়েক পুরুষের পেশা। রবিবারের রথের মেলা। তার আগে ব্যস্ততা তুঙ্গে। পাশে মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে এক বৃদ্ধ মাঝে মাঝেই নাতিদের তাড়া দিচ্ছেন, ‘‘কই রে, হল? এখনও তো বাঘ, হাতি, কুকুর বাকি। চটপট কর।’’

ষাটোর্ধ্ব শঙ্কর সূত্রধরের মতোই ঝালদার জেলে পাড়ার মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। দম ফেলারও ফুরসত নেই যেন। তাঁরা সবাই রথের মেলায় মাটির পুতুলের দোকান দেন। মূলত প্রতিমা গড়েই সংসার চলে তাঁর। মাঝে মাঝে অন্য মূর্তি গড়ার বরাতও মেলে। শঙ্কর জানান, সাবেক হাতি, বাঘ, টিয়া, পায়রা, কুকুর বা সাধুবাবার ছোট ছোট পুতুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইদানীং বাড়ছে মোটু-পাতলু বা ছোটা ভীমের মূর্তির চাহিদা।

তবে পরিশ্রমের দাম আর মেলে কই! নদীর ধার থেকে নরম মাটি এনে, পুতুল গড়ে, শুকিয়ে, রং করে খদ্দেরের হাতে তুলে দেওয়ার যে খাটনি তার মূল্য সাকুল্যে দশ-বিশ টাকা। বড় পুতুল হলে আর কটা টাকা বেশি বড়জোর। তার বেশি বললে আর কেউ কিনতে চান না।

তবুও এক দিনের মেলায় পসরা নিয়ে যান মৃৎশিল্পীরা। শিল্পী মধুসূদন সূত্রধর, কাশীরাম সূত্রধরেরা বলেন, ‘‘লাভ যে বড় একটা হয় তা নয়। কিন্তু যাঁরা পুতুল কিনতেই ঝালদায় আসেন তাঁদের হাতে সুন্দর পুতুল তুলে দিতে পারলে ভাল লাগে।’’

শঙ্করও বলেন, ‘‘ঐতিহ্য বলে তো একটা ব্যাপার আছে! সেই কোন ছোটবেলায় বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে এই পেশায় ঢুকে পড়েছিলাম।’’ নাতিদের দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওদের মতোই বয়স হবে তখন। আজও সেই ছেলেবেলার মতোই উত্তেজনা হয় মাটির তাল নিয়ে পুতুল বানাতে বসলে।’’

ঝালদার মৃৎশিল্পীরা জানান, মাঝে মাটির পুতুলের চাহিদা কমে গিয়েছিল। ইদানীং একটু একটু করে আবার বাড়ছে। গত বছর মেলায় সবার ভাল বিকিকিনি হয়েছিল। তাই এ বারে আরও বেশি পুতুল তৈরি করেছেন তাঁরা।

ঝালদার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘আমি নিজে ছোটবেলায় কত মাটির পুতুল কিনেছি। এই পুতুল নিয়ে কত মানুষের কত স্মৃতি রয়েছে। রথ এলেই ছোটবেলায় পুতুল কেনার কথা মনে পড়ে। এ বারও কিনব।’’

ঝালদায় বড় হয়ে ওঠা বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা শিল্পপতি নরেশ অগ্রবালও মাটির পুতুলের স্মৃতিতে মশগুল। তাঁর কথায়, ‘‘ঝালদার রথের মেলায় মাটির পুতুলের আকর্ষণ আজও ভোলার নয়।’’

নরেশ জানান, এখন পুরুলিয়ার এই সমস্ত মাটির পুতুল দিয়ে একটি মিউজিয়ম তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি।

Festival Ratha Yatra Potter মৃৎশিল্পী রথ মেলা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy