Advertisement
E-Paper

পাশে প্রাক্তনী, বদল মিড-ডে মিলে

স্কুলের মিড-ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের পাতে একটু মাছ, মাংস, ডিম কিংবা মিষ্টি তুলে দেওয়ার জন্য এলাকার ভোজবাড়িতে সাহায্যের আর্জি নিয়ে হাজির হওয়ার পরিকল্পনা ছিল শিক্ষকদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৩
পাত পেড়ে। বৃহস্পতিবার আমোদপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পাত পেড়ে। বৃহস্পতিবার আমোদপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের মিড-ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের পাতে একটু মাছ, মাংস, ডিম কিংবা মিষ্টি তুলে দেওয়ার জন্য এলাকার ভোজবাড়িতে সাহায্যের আর্জি নিয়ে হাজির হওয়ার পরিকল্পনা ছিল শিক্ষকদের। কিন্তু তার আগেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন স্কুলেরই প্রাক্তনীরা। পিকনিকের খরচ বাঁচিয়ে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে। সেই টাকায় বৃহস্পতিবার মিড-ডে মিলে ভরপেট আলুপোস্ত, ডাল, চাটনি, মিষ্টি-সহ মাংসভাত খেল আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের পড়ুয়ারা।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল খাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়লেও এক বড় সংখ্যকই ওই আওতার বাইরে রয়েছে। ওই সব ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, যারা মিড-ডে মিল খায় তাদের মধ্যেও রোজ রোজ একই খাবার নিয়ে অনীহা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তা এবং শিক্ষকদেরও বিষয়টি অজানা নয়। কিন্তু তাঁদেরও হাত-পা বাঁধা। কারণ, সীমিত বরাদ্দে মিড-ডে মিলে স্বাদ বৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে প্রশাসনিক কর্তারাই মনে করেন। তাই সীমিত বরাদ্দেই স্বাদ বৈচিত্র্য রক্ষার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক কর্তা, শিক্ষক এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নদিয়ার কল্যাণীতে তিন দিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কর্মশালায় মিড-ডে মিলের মেনুতে বৈচিত্র্য আনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সামিল করার বিষয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব নেওয়া হয়।

তার মধ্যে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পায় ভোজবাড়িতে সাহায্যের আর্জি নিয়ে শিক্ষকদের হাজির হওয়ার প্রস্তাবটি। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিটি ভোজেই কমবেশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত আয়োজন করা হয়। ভোজের সময় গৃহকর্তারা কিছুটা উদার হৃদয়ও হন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা যদি ওই সব ভোজবাড়িতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাছ, মাংস কিংবা মিষ্টি সাহায্যের আর্জি জানান তা হলে ইতিবাচক সাড়া মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বছরের বেশ কয়েকটা দিন ছাত্রছাত্রীদের কাছে মিড-ডে মিল আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই প্রথম সহযোগিতার বাড়িয়ে দেন আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের প্রাক্তনীরা। প্রায় ৬০ জন প্রাক্তনী তাঁদের পিকনিকের খরচ বাঁচিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন ৫০০০ টাকা। তাঁদেরই অন্যতম কল্যাণ প্রামাণিক, মন্টু সাধু, নীলাঞ্জন মণ্ডল, সম্রাট সাধু, অয়ন মুখোপাধ্যায়, সুমন মণ্ডলরা বলেন, ‘‘পরিকল্পনার কথা জেনে কিছু একটা করার কথা ভেবেছিলাম। তাই পিকনিকের মেনু কাটছাঁট করে টাকাটা তুলে দিতে পেরে সত্যিই খুব ভাল লাগছে।’’

আর খাওয়া শেষে হাত চাটতে চাটতে পঞ্চম শ্রেণির সৌভিক বাগদি, সপ্তম শ্রেণির সুকান্ত ঘোষরা বলছে, ‘‘বাড়িতেও এ রকম খাওয়াদাওয়া হয় না। মনে হল যেন ভোজবাড়ির খাওয়া। মাঝে মধ্যে এ রকম হলে তো ভালই হয়।’’

তৃপ্তির ছোঁয়া মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও চোখেমুখে। রামকৃষ্ণ মণ্ডল, সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘বড় ভাল লাগল আজ ছেলেমেয়েদের খাওয়া দেখে। সবাই চেটেপুটে খেয়েছে। রোজ রোজ একই মেনু আমাদেরই ভাল লাগে না। বাচ্চাদের তো না লাগারই কথা।’’ মহুয়া ভট্টাচার্য, বিকাশ গড়াইরা জানান, প্রাক্তনীদের দেওয়া টাকায় পড়ুয়াদের আরও এক দিন ডিমভাত খাওয়ানো যাবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্য, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বাণীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলে স্বাদ বৈচিত্র্য রক্ষা করতে প্রাক্তনীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষক, পরিচালন সমিতির সদস্যেরাই প্রথম দিকে তাঁদের বাড়ির অনুষ্ঠানের খাদ্য সামগ্রী কিংবা খরচ বাঁচিয়ে তুলে দেবেন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে।’’

Mid Day Meal Menu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy