Advertisement
E-Paper

ধর্ষণের ছবি তুলে আপলোড

অভিযোগকারিণীর বাবার অভিযোগ, সাবির মেয়ের কাছে মাঝে মধ্যেই টাকা চাইত। ভয় দেখাত টাকা না পেলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। ভয়ে মেয়ে অল্পস্বল্প টাকা লুকিয়ে সাবিরকে দিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০১:২২

এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করা ও সেই ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ইন্দাস থানার কর্মরত ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম শেখ সাবির। ইন্দাসের রোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ফাটিকা গ্রামে তার বাড়ি। বৃহস্পতিবার বছর আটাশের ওই যুবককে গ্রেফতার করে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ধর্ষণ ও ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তির আইনে মামলা শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ বিষ্ণুপুর আদালতের বিশেষ আদালতে পকসো (প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফর্ম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে মামলা শুরু হয়েছে।

ওই নাবালিকার পরিবার সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সাবির তাকে বাড়িতে এসে পড়ানো শুরু করে। বছর দুয়েক সাবিরের কাছেই ওই মেয়েটি পড়াশোনা করে। সেই সময়েই ওদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তা নজরে আসতেই পরিবার থেকে সাবিরের কাছে টিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি করে মেয়ের বিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু সাবির মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেনি।

অভিযোগকারিণীর বাবার অভিযোগ, সাবির মেয়ের কাছে মাঝে মধ্যেই টাকা চাইত। ভয় দেখাত টাকা না পেলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। ভয়ে মেয়ে অল্পস্বল্প টাকা লুকিয়ে সাবিরকে দিয়েছিল। দিন পনেরো আগে হঠাৎ করে সাবির মেয়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে বসে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দিন দিন সাবিরের ব্ল্যাকমেল-এ মেয়ে খুব চাপে পড়ে গিয়েছিল। তার উপরে অত টাকা সে কোথায়, কী ভাবে জোগাড় করবে ভেবে অস্থির হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মেয়ে তাকে ওই টাকা আর দিতে পারেনি। এরপরেই সাবির হোয়্যাটস অ্যাপ এবং ফেসবুকে মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ছেড়ে দেয়।’’

ঘটনাটি নজরে আসতেই ওই নাবালিকা বুধবার ইন্দাস থানায় সাবিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি পোস্ট করার অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পাওয়ার পর থেকেই সাবিরের আচরণ অনেক বদলে যায়। পুলিশের নাম করে সে এলাকায় বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে বলে অভিযোগ। মামলা ঘুরিয়ে দেওয়ার নাম করেও টাকা সে নিত বলে অনেকের দাবি। ফলে তার বিরুদ্ধে এলাকায় ক্ষোভ ছিলই। এই ঘটনায় ঘি পড়েছে। তাকে চরম শাস্তি দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার এলাকায় পোস্টার পড়ে।

মেয়ের বাবার আরও অভিযোগ, ‘‘ইন্দাস থানার সঙ্গে সাবিরের যোগাযোগ থাকায়, সমস্ত রকম প্রভাব প্রতিপ্রত্তি সে খাটিয়ে মামলা লঘু করার চেষ্টা করছে। আইন রক্ষার দায়িত্বে থাকা এক সিভিক ভলান্টিয়ার যদি এই কুকর্ম করে, তবে মানুষ কাকে ভরসা করবে? সমাজের পক্ষেও খারাপ।’’ চেষ্টা করেও অভিযুক্ত বা তার পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ দিকে এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ইন্দাসের বাসিন্দা অসীম দাস অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে থেকেই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ দেওয়া হয়েছে। ওই দলটার সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। তাই এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার এমন কুকর্ম করায় প্রশাসন চুপ করে রয়েছে।’’

তবে ইন্দাস ব্লক তৃণমূল সভাপতি রবিউল হোসেনের দাবি, ‘‘সাবির আমাদের দলের কেউ নয়। তবে বিরোধীরা এখন সব কিছুতেই তৃণমূলের দোষ দেখতে পাচ্ছে। ওই ঘটনা সত্যি, না ফাঁসানো তা খবর নিয়ে দেখতে হবে।’’ যদিও ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে বলছেন, ‘‘এক জন মহিলাকে নির্যাতন যেই করুক না কেন, তার শাস্তি হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে দোষি ব্যক্তি তৃণমূল করলেও পার পাওয়া উচিত নয়।’’

Civic volunteer Rape Video Arrest Social Media সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট সিভিক ভলান্টিয়ার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy